আধ কাটার গল্প
দ্বিখন্ডিত দামোদরের মাঝে গড়ে ওঠা গ্রাম – ভাঙ্গামোরা। বর্গীদের সময়কালে এ অঞ্চল ছিল উচ্চ বংশীয় ব্রাহ্মণদের বসবাস। গড়ে উঠেছিল বহু হিন্দু মন্দির। এমনই একটি মন্দির নিয়ে এই আধ-কাটার গল্প। ভাঙ্গামোড়া গ্রামের ছোট্ট একটি জায়গা আধ-কাটা। তৎকালীন সময়ে গড়ে ওঠা আনুমানিক প্রায় 300 বছরেরও বেশি প্রাচীন দুটি টেরাকোটা মন্দিরের অবস্থান এই আধ-কাটা অঞ্চলে।
ইতিহাস জানা না গেলেও আটচালা বিশিষ্ট সুবিশাল মূল মন্দিরটি বিষ্ণু মন্দির ছিল বলে অনুমান করা হয়। মন্দিরের গঠনশৈলী চমকপ্রদ। মন্দির গাত্রে রামায়ণের কাহিনী বর্ণিত সুনিপুণ টেরাকোটা। প্রায় 20/25 ইঞ্চি পুরু মন্দিরের দেওয়াল।
মন্দিরের চূড়ার নিচে একটি ছোট কক্ষ আছে। ভেতরে সিঁড়ি রয়েছে ওই কক্ষে পৌঁছানোর জন্য। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে শেষপ্রান্তে নির্মিত ঢাকনায় তলা থেকে বল প্রয়োগ করে উপরদিকে খুলে কক্ষে প্রবেশ করতে হয়।
মন্দিরের নীচেও একটি গুপ্ত কক্ষ এবং একটি সুরঙ্গ পথ আছে। সম্ভবত এই সুরঙ্গ পথ দিয়ে গ্রামের বাইরে চলে যাওয়া যেত। বর্গী আক্রমন থেকে রক্ষা পেতে এই সুরঙ্গপথ ও কক্ষগুলি ব্যবহার করা হতো বলে অনুমান করা হয়। কিংবদন্তি আছে – এক সন্ন্যাসী এই সুড়ঙ্গ পথে ঢুকে আর বেরিয়ে আসেননি।
স্থানীয় মানুষ মনে করে অসুরেরা রাতারাতি এই মন্দির তৈরী করে। সেই রাতেই মন্দিরের পাশে পুকুর কাটাও শুরু হয়। অর্ধেক পুকুর কাটার পর ভোরের আলো দেখা দিলে রাত শেষ হওয়ার ভয়ে অসুরেরা কোদাল-টোদাল ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
সেই অর্ধেক কাটা পুকুর থেকেই জায়গার নাম “আধকাটা”।তবে কিংবদন্তি আছে – মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা এক রাত্রির মধ্যে মন্দিরের পাশে একটি বিশাল পুকুর খনন করাবেন বলে পরিকল্পনা করেন। গ্রামবাসীর মনে একটি বিস্ময় ভাব গড়ে তোলা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল। সকালে উঠে মানুষ দেখবে এবং বলবে কোন দৈববলে পুকুর তৈরি হয়েছে। খনন কার্য চলাকালীন মধ্যরাত্রে বর্গী আক্রমণের খবর আসে। আক্রমণের ভয়ে খননকারীরা অর্ধেক কাটা পুকুরের কাজ বন্ধ করে চলে যায়। খননকার্যে খুঁত বা বাধা হওয়ায় পুকুরটি পুনরায় খনন করা হয়নি।
আরো একটি কিংবদন্তি শোনা যায়, পুকুর খনন কার্য চলাকালীন মাঝরাতে একটি কাক “কা-কা” করে ডেকে ওঠে। খননকারীরা ভোর হয়ে গেছে ভেবে কাজ বন্ধ করে চলে যায়। এইভাবে অর্ধেক কাটা পুকুর থেকে জায়গার নাম “আধকাটা”।
পথদিশা:
হাওড়া-তারকেশ্বর লোকাল ট্রেনে তারকেশ্বরে নেমে সেখান থেকে বাস ধরে দেউলপাড়া। দেউলপাড়া থেকে ডানদিকে বাঁধের রাস্তা ধরে ভাঙ্গামোড়া ৭ কিমি।| দেউলপাড়া থেকে ভাঙ্গামোড়া যাওয়ার জন্য মোটরভ্যান বা ট্রেকার পাওয়া যায় তবে তা সংখ্যায় কম।
নিকটবর্তী দর্শনীয়:
ভাঙ্গামোড়া, বৈকুন্ঠপুর, সৌলুক, দেউলপাড়া, তারকেশ্বর।
I am Soumendu Das from Chandannagar, Hooghly, West Bengal. Life itself is a journey to me and travel is just a part of it. I am not a traveler. I live life in my way and sometimes my experience turns into travel.