১:
“সব তীর্থ বার বার,
গঙ্গাসাগর একবার।”
সেই কলেজ জীবন থেকে এই দুটি পংক্তির মানে খুঁজতাম। কোনো দুর্গম পাহাড় তো নয়। অথবা মরু তীর্থ হিংলাজও নয়। তবে কেন গঙ্গাসাগর একবার? তীর্থ প্রীতি যে আমার খুব একটা আছে তা নয়। বরং উল্টো। ভীড় ভাট্টা তে নিজের সত্ত্বা টাকেই হারিয়ে ফেলি। প্রশ্নের ওই উত্তরগুলো খুঁজতে তাই আগস্ট মাসের একটা শনিবার শিয়ালদা সাউথ থেকে ৭.১৫ র নামখানা লোকালে উঠে পড়লাম। বরুন দেবের এই বছর পশ্চিমবঙ্গের উপর কেন যে এতটা প্রেম উথলে উঠলো, তা বলা মুশকিল। কখনো ইলশেগুঁড়ি কখনো বা মুষলধারে…বর্ষার নানা রূপ, চাষের জমিতে নতুন ধান রোয়া আর পানিফলের চাষ দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম কাকদ্বীপে। স্টেশন থেকে একটি টোটো নিয়ে চলে এলাম ৮ নং লট গেট জেটিতে। এখান থেকে লঞ্চ নিয়ে যেতে হবে কচুবেরিয়া ঘাটে। সাগর দ্বীপের এই প্রান্তের গ্রামটির নাম কচুবেরিয়া। দ্বীপের একদম অপর প্রান্তেই হলো সেই গ্রাম, যাকে আমরা গঙ্গাসাগর বলে চিনি। লঞ্চ টা বেশ বড়সড়।
প্রায় ৪৫ মিনিটের লঞ্চ যাত্রা। আমার ভাগ্য ভালো যে আমি টোটো থেকে নেমেই সঙ্গে সঙ্গে লঞ্চ পেয়ে গেলাম। বসার জায়গা পেলাম না। ৬০% লঞ্চ ভরে রয়েছে গেরুয়া বসন পরা মহাদেবের ভক্ত বৃন্দতে। বুঝলাম যতটা ফাঁকায় ফাঁকায় সাগর দ্বীপ ঘুরবো ভেবেছিলাম, ততটা হবে না।
২:
মুড়ি গঙ্গার অতল জলরাশির মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চললাম। সাগর এখানে দীঘার মত আগ্রাসী না হলেও তার ব্যাপ্তি দেখে বুকের ভেতর টা একটু যেন হালকা হয়ে গেল। ছোট ছোট ঢেউ গুলির সাথে এক্কা দোক্কা খেলতে খেলতে এগোতে লাগলো আমাদের লঞ্চ। দূর সীমানায় তখন আবছা রেখার মত দেখা যাচ্ছে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের একেকটি দ্বীপ। তার মধ্যে কোনটা হয়ত সাগর দ্বীপ, কোনটা মৌসুনী, কোনটা আরো ছোট, নামকরণ না হওয়া কোনো দ্বীপ। এইখানে একটা কথা বলে রাখি। সাগর দ্বীপের রোমাঞ্চ টা অনুভব করতে হলে দ্বীপের ভৌগোলিক অবস্থান টা বোঝা আবশ্যক। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের অনেক গুলি ব-দ্বীপের মধ্যে, সব থেকে বড় দ্বীপ হলো সাগর। প্রায় ৩০০ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত এই দ্বীপ জলপথ ছাড়া সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। আজ না হয় মোটর চালিত লঞ্চ আছে। লঞ্চে দাঁড়িয়ে আমার চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম শুধু জল আর জল। পেছনে ফেলে আসা ৮ নং লট গেট জেটি তখন এত আবছা, যে আর দৃশ্যমান নয়। মন টা হঠাৎ পিছিয়ে গেল অনেক অনেক বছর আগে….যখন হয়তো এখানে মোটর চালিত লঞ্চ ছিল না। একমাত্র উপায় তখন হয়তো ছিল ছোট ছোট নৌকো। আমাদের এত বড় লঞ্চ টাও যেভাবে ঢেউয়ের চাপে দোল খাচ্ছে, তাতে সহজেই আন্দাজ করা যায় এই বিপুল জলরাশির মাঝে ছোট নৌকো বা ডিঙ্গি নৌকোর কি অবস্থা হত তখনকার দিনে আর কতক্ষন সময় লাগতো পৌঁছতে! শিউরে উঠলাম ভয়। এই যাত্রা আরো হাড় হীম করে দিত মকর সংক্রান্তির ঠান্ডা। এর জন্যেই কি তবে… গঙ্গাসাগর একবার? হয়তো তাই। কারণ কতগুলো নৌকো সশরীরে তখনকার দিনে এই সাগর পার করতে পারতো, তা নিয়ে সংশয় তো আছেই! অবশেষে ধীরে ধীরে চোখের সামনে দৃশ্যমান হতে থাকলো আমার গন্তব্য সাগর দ্বীপের কচুবেরিয়া জেটি টি। বেশ সুন্দর একটি সাজানো গেট স্বাগত জানালো আমাদের লঞ্চ টিকে। ঘাটে নামলাম প্রায় ১২ টায়। এবার পালা আমার যাত্রাপথের অন্তিম ধাপের।
৩:
লঞ্চ ঘাট থেকে বেরিয়ে একটু এগোতেই চোখে পড়লো ২-৩ টি ভাতের হোটেল। বাসে আরো এক ঘন্টার যাত্রাপথ শুনে, মধ্যাহ্নভোজ টা এর মধ্যেই একটি হোটেলে সেরে নিলাম। বাস স্ট্যান্ড টা আরেকটু এগিয়ে। শুনলাম বাস ছাড়তে তখনও মিনিট ২০। আশপাশের দোকানহাট এবং বাড়িগুলো দেখে বোঝা যায় এটি একটি প্রত্যন্ত দ্বীপ হলেও, সরকারের সুনজর এড়ায়নি। প্রায় ১৭ কিমি এই বাস রাস্তা দ্বীপের বুক চিরে এপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত চলে গেছে। ৪৩ টি গ্রামে বিভক্ত এই সাগর দ্বীপ। যারা গ্রুপে যাবেন, তাঁরা বাসের বদলে magic ভাড়া করেও যেতে পারেন। তাতে কিছুটা সময় বাঁচবে। বাসে যেতে যেতে দুপাশের দৃশ্য দেখে মনেই হলো না আমি এক সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন দ্বীপে আছি এখন….কোনো কারণে যদি লঞ্চ বন্ধ হয়ে যায়, ঘরে ফেরার আর কোনো উপায় নেই ! Electricity থেকে Internet, সমস্ত আধুনিক সাজ সরঞ্জামই আছে এমন এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপে। আমার অনলাইন বুকিং করা ছিল Youth Hostel এ। বাস স্ট্যান্ড এ নেমে মিনিট সাতেক হেঁটে অবশেষে পৌঁছে গেলাম ইয়ুথ হোস্টেল। সুবিশাল কম্পাউন্ড এনাদের। রুম গুলো যথেষ্ট spacious। সকালের দিকে যে ঘিনঘিনে বৃষ্টি ছিল, তার এখন অবসান হয়েছে। হালকা রোদ ও উকিঁ মারছে। ঠিক করে নিলাম একটু ফ্রেশ হয়েই বেরিয়ে পড়বো সাগর পারে, বিকেলের সুর্যাস্ত টাও উপভোগ করা যাবে। বেরোনোর আগে জানলা দিয়ে চোখে পড়লো Indian Roller, ঠিক সামনের বাউন্ডারি ওয়াল এর রেলিং এ বসে। প্রথম ছবি টা তুলে বেরিয়ে পড়লাম, ক্যামেরার ব্যাগ টা পিঠে চাপিয়ে।
৪:
লজ থেকে সমুদ্র তট মিনিট ১০ একের হাঁটা পথ। কপিল মুনির আশ্রমের পেছন দিক দিয়ে দেখলাম একটা রাস্তা সোজা চলে গেছে একটা গ্রামের দিকে। রাস্তা টা বেশ সুন্দর লাগলো। পায়ে পায়ে এগোতে থাকলাম সেদিকে। রাস্তার দুপাশে প্রথম দিকটায় পেলাম ফাঁকা জমি অনেকগুলো। ডান দিকে দেখলাম বেশ কিছু কাঠের সুসজ্জিত বাংলো।
খোঁজ নিয়ে জানলাম সবই ওগুলো সরকারী বাংলো। মিনিস্টার রা এসে থাকেন। ফাঁকা জমি গুলিতে মেলা পাখি। Red wattled lapwing আর pond heron এর ছড়াছড়ি। আরো কিছুটা এগোতেই দেখি বাঁদিকে সি বিচ এর দিকে ঝাউবন। ডানদিকে কিছু জলা জমি। তার মধ্যে দিয়ে সরু একফালি রাস্তা চলেছে গ্রামের দিকে। গ্রাম বলতে কয়েক ঘর জেলেদের বাড়ি বলেই মনে হলো। প্রাণ ভরে ছবি তুলে চলেছি পাখি গুলির। Red wattled lapwing খুবই লাজুক পাখি।
ওকে stalk করে ফ্রেম বন্দি করতে বেশ খানিক সময় লাগলো। সামনেই দেখি একটা পরিত্যক্ত কুঁড়ে ঘর। খড়ের ছাদের ভেতর থেকে জীর্ণ বাঁশ গুলো বেরিয়ে আছে। তারই একটাতে দেখি Indian Roller. সন্তর্পনে এগিয়ে গিয়ে ফ্রেম বন্দি করলাম। ইতিমধ্যে দেখি ঈশান কোনে আমার অজান্তেই বেশ ঘন কালো মেঘ এসে জমেছে। গ্রামের তিন মহিলা একটি সাইকেল ভ্যান নিয়ে গ্রামের পথে মিলিয়ে গেল।
বেশ কিছু ছবি ততক্ষনে মনের ক্যানভাস এ একে রেখেছি, লেন্স তা বদল করে ছবিগুলো তুলবো বলে। সবে লেন্স টা বদলে ব্যাগ প্যাক টা পুনরায় পিঠে নিয়েছি। দেখি কয়েক ফোটা বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। তৎক্ষণাৎ ক্যামেরা ব্যাগে পুরে দৌড় লাগলাম কাছের একটা ঘন ঝোপের আড়ালে। ততক্ষনে বেশ জোরে নেমে গেছে বৃষ্টি। আশপাশে আশ্রয় নেওয়ার মতো কোনো জায়গাই নেই। তবু মনে হলো সি বিচের ঝাউ বন টা হয়তো কিছুটা বাঁচাবে। দৌড় লাগালাম সেদিকে। বৃষ্টির তেজ ততক্ষনে পঞ্চম গিয়ার্ এ। ব্যাগ প্যাক টা বুকের কাছে নিয়ে ছাতা দিয়ে ক্যামেরা আর লেন্স গুলোকে বাঁচালাম। নিজে তখন চুপচুপে ভিজে, মাথা টা ছাড়া। একটু দূরে দেখলাম একটা খড় আর দরমার ঘর। কাছে গিয়ে দেখি ঘরে উল্টোদিকে মাটিতে বাঁশের খুঁটির ওপর কালো প্লাষ্টিক দিয়ে টেন্ট এর মত করা। তিনটি মুখ দেখি উকিঁ মারছে আমার দিকে। ওনাদের জিজ্ঞেস করে জানলাম কুঁড়ে ঘরটি এক সাধুর কিন্তু এখন সেটি বন্ধ। অগত্যা আবার ফিরে এলাম ঝাউবনে। প্রায় আধ ঘন্টা ঠায় দাঁড়িয়ে ভেজার পর বৃষ্টি অবশেষে কমলো। সাগরের দিকে এগিয়ে দেখি আকাশ আর সাগর দুটোই যেন এক ধূসর রঙে মিলে মিশে একাকার।
বিচের এদিকটায় লোকজন বিশেষ নেই। সাদা বালির ওপর দিয়ে এগিয়ে চললাম কপিল মুনির আশ্রম বরাবর বিচের দিকে। জনসমাগম ওদিকটাতেই। হয়তো বৃষ্টির জন্যই, সাগর এখন বেশ দামাল। ঢেউয়ের গর্জন কোনো অংশে দীঘার থেকে কম নয়। মহাদেবের শিষ্যরা কাঁধে বাঁক নিয়ে সাগরের জল ভরছে পাত্রে। এক সাধু নিজের খেয়ালই এগিয়ে চলেছে সমুদ্রের দিকে। হালকা বৃষ্টির ফাঁকে ফাঁকেই, পড়ন্ত আলোয় কিছু ছবি নিয়ে এগোলাম কপিল মুনির আশ্রমের দিকে। মন্দিরটি বেশ পরিষ্কার আর ছিমছাম। নির্বিঘ্নে দর্শন করলাম। মন্দিরের পাশেই দেখলাম দুধারে সারি সারি সাধুদের থাকার জায়গা। একেকটি খুপরি হয়তো ৬ বাই ৬ ফুটের হবে। ভিজে অবস্থায় আর বেশিক্ষন না দাঁড়িয়ে লজের দিকে পা বাড়ালাম। সন্ধ্যে নেমে এসেছে ততক্ষনে।
৫:
পরের দিন ভোরবেলা উঠে দেখি আকাশের মুখ ভার। সূর্যোদয় দেখা আর হলো না। মন টা একটু ভার, আজ তো ফেরার দিন। তবে ম্যানেজার বাবুর সাথে কথা বলে ফেরার একটু অন্য রুট ঠিক করে ফেললাম। ম্যানেজার বাবুর ছেলেরই একটি টোটো আছে। ওনার সাথে কথা বলে বুঝলাম ফেরার দিনটা একেবারে নিরস হবে না। বেশ পুলকিত চিত্তে ইয়ুথ হস্টেল কে বিদায় জানিয়ে টোটো তে উঠে বেরিয়ে পড়লাম। পথে পড়লো প্রথমেই ওমকারনাথ মন্দির। থাকার জায়গাও আছে এখানে। বেশ সুন্দর পরিবেশ এই আশ্রমে। এরপর চলে এলাম ভারত সেবাশ্রম সংঘ। ঝকঝকে প্রাঙ্গন। অদ্ভুত এক মন ভালো করা স্নিগ্ধতা যেন মেখে আছে আশ্রমের ভেতরে। খুব কাছেই আছে রামকৃষ্ণ মিশন। পরবর্তী গন্তব্য লাইট হাউস।
লাইট হাউসে উঠতে দেবে কিনা সেটা নিয়ে একটা সংশয় থাকলেও, দমলাম না। যাওয়ার সময় বুঝলাম ঠকিনি। লাইট হাউস যাওয়ার রাস্তা টা বড় সুন্দর। গ্রামের মধ্যে দিয়ে রাস্তা। পাশের সবুজ ধানক্ষেত দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। ধান রোয়া চলছে তখন। ক্যামেরা নিয়ে টোটো ছেড়ে নামতেই, চাষী বউয়েরা ধান রোযার ফাঁকেই লাজুক দৃষ্টি নিয়ে আমার শহুরে ক্যারিক্যাচার দেখছে।
মিষ্টি এই গ্রামের সুবাস নিতে নিতে অবশেষে পৌঁছলাম সাগর পারে। সাগর এখানে রুদ্র মূর্তী। বোল্ডার এসে ঝাঁপিয়ে পড়ছে একের পর এক ঢেউ। কালকের সেই সাগরের থেকে সে সম্পূর্ণ আলাদা। লাইট হাউস টা অবশ্য সাগর পারে নয়। কিছুটা এগিয়ে গিয়ে তবে এই লাইট হাউস। সাধারণের জন্যে সত্যি প্রবেশ বন্ধ।
৬:
লাইট হাউস দেখে আমার যাওয়ার কথা সোজা চেমাগুড়ি লঞ্চ ঘাট। সেখান থেকে লঞ্চে ওপারে কাকদ্বীপ। টোটো ওয়ালা ভাইটি আমার ভবঘুরে স্বভাব বুঝে গিয়ে মাঝে সংযোজন করলো নাগরাজের মন্দির।
নাগরাজের মন্দির দর্শন করে এগোতে থাকলাম চেমাগুড়ির পথে। অনেক কিছু না পাওয়া রয়ে যেত এই পথে না ফিরলে। দুই ধারে ধানক্ষেতের বুক চিরে ছুটে চললো টোটো। ধানক্ষেতের ফাঁকে ফাঁকে কোথাও পান চাষে হচ্ছে। খুব সযত্নে পান গাছ গুলি বেরা দিয়ে আর চাল দিয়ে ঘেরা। দূর থেকে দেখে মনে হইছে কোনো কুঁড়ে ঘর।
যত এগোতে থাকলাম, ধীরে ধীরে দৃশ্যপট ও বদলাতে থাকলো। ধানক্ষেত মিলিয়ে গিয়ে কোথা থেকে যেন আমার দুপাশে মানগ্রোভের উদয় হয়েছে। সাগর দ্বীপ যে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনের মতোই ব-দ্বীপ, তার প্রমান এখানে যেন স্পষ্ট। ভাগ্য আজ আমার সাথে। চেমাগুড়ি ঘাটে পৌঁছতেই দেখি লঞ্চ অপেক্ষারত। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে ততক্ষনে। এই লঞ্চ গুলোর গড়ন টা অনেকটাই ছোট কচুবেরিয়ার থেকে। ওপরের অর্ধেকটা জায়গা বেশ লোভনীয়। মাথার ওপর কোনো ছাউনি নেই। অনেকটা সেই জয় বাবা ফেলুনাথে, মগনলাল মেঘরাজের বজরার মাথায় চড়ে আসার মতন ব্যাপারটা। লোভ সামলাতে না পেরে, বৃষ্টি মাথায় নিয়েই ছাতা খুলে ওপরের খোলা ডকে বসে পড়লাম। মিনিট পনেরোর মধ্যে লঞ্চ পাড়ি দিল কাকদ্বীপের উদ্দেশ্যে।
৭:
লঞ্চটি যেখানে নোঙর করা ছিল, সেটা একটি খাঁড়ি। এক দুটি বেশ বড় মাছ ধরা ট্রলার চোখে পড়লো সেই খাঁড়ি তে। খাঁড়ির মধ্যে দিয়ে ক্রমশ এগোতে লাগলো লঞ্চ মূল সাগরের দিকে। আমি হলপ করে বলতে পারি কাউকে যদি চোখ বেঁধে এই লঞ্চ টিতে এনে ছেড়ে দেওয়া হয়, চোখ খোলার পর আশপাশ দেখে সে যে সুন্দরবনের গভীরে কোনো এক খাঁড়ি তে ভেসে বেড়াচ্ছে…এইটা ছাড়া আর কিছু তার মাথায় আসবে না। লঞ্চ এর ঢেউয়ের ধাক্কায় আশপাশের ডাঙ্গার পার গুলো যেন থেকে থেকে ডুব সাঁতার দিচ্ছে। এক খাঁড়ি থেকে অন্য খাঁড়ি জলকেলি করতে করতেই অবশেষে এসে পড়লাম মাঝ সাগরে।
সাগরের অনেকটা জলপথ আমাদের সঙ্গ দিলো গুটি কয়েক sea gull।
যাত্রাপথে এক জায়গায় দেখলাম সারী দিয়ে মাছ ধরা ট্রলার গুলো ধেয়ে আসছে। লাল রঙা এই ট্রলার গুলো যেন জানান দিচ্ছে এ সাগর তাদের। অবশেষে এসে পৌঁছলাম হাতানিয়া দোয়ানিয়া নদীতে। থিক থিক করছে পাড়ের কাছে বড় বড় লঞ্চ আর ট্রলার। কোথাও বা তাদের সামনে দিয়েই বয়ে চলেছে যাত্রী বোঝাই কোনো নৌকো। নামখানা জেটিতে নেমে কিছুটা এগিয়েই পেয়ে গেলাম দাঁড়িয়ে থাকা কোলকাতার বাস। পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম সবচেয়ে আয়তনে বড় ব-দ্বীপ কে বিদায় জানিয়ে, রওনা দিলাম কোলকাতার উদ্দেশ্যে।
Hi! I am from Kolkata, India. Travelling and photography is my passion. As I love landscape photography most, travelling goes hand in hand with it. Since my matriculation days I started travelling. I have also penned down a book on my travelling which is available in Amazon in the name of Ghuranchandi – Part 1. Whatever travel experiences I have, I have shared those in my blog in the form of travel stories.