১:
রাত দুটোর সময় হঠাৎ ঘুম টা ভেঙে গেল। মনে হল সামনের নদী দিয়ে কল কল করে জলের আওয়াজ আসছে। উঠে কান খাড়া করে শুনলাম। বুঝলাম নদীতে জল আসেনি। মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। আসলে সকালে কেয়ারটেকার উত্তমের কথায় একটু তটস্থ হয়ে ছিলাম…বলে কিনা ভুটান পাহাড়ে বৃষ্টি হলেই সুক্তিখোলা নদী তে হুড়মুড় করে জল নামে। সম্পূর্ণ শুকনো নদী তখন পাহাড়ি হিংস্র নদী হয়ে ওঠে। আর সেটা হওয়া মানে আমি বন্দি বান্দাপানি ফরেস্ট ইন্সপেকশন বাংলো তে যতক্ষন না জল সরছে।
২:
হ্যাঁ। উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যেও ঠিকই করে নিলাম আসবো বান্দাপানি, যতই ঝামেলা হোক। ঈদের ছুটি টা নষ্ট করার কোনো মানে হয়না। উঠেই পড়লাম ২৩ জুন এর কাঞ্চন কন্যায়। দলগাও নামলাম পরদিন প্রায় ১২ টায়। Omni ভাড়া করে পারি দিলাম ১৫ কিমি দূর বান্দাপানির উদ্দেশ্যে। স্থানীয় নাম বিরপাড়া। মাঝে সুক্তিখোলা নদী। বেশ চওড়া। এই নদীর চরের ওপর দিয়েই গাড়ি যায়। আর কোনো আলাদা পথ নেই। নদীর মাঝে এসে ছবি তোলার জন্য গাড়ি থেকে নামলাম।
যেদিকে চোখ যায় দেখি সাদা মরুভুমি। হঠাৎ দেখলে রান অফ কুচ বলে ভুল হতেই পারে। কিঞ্চিৎ দূরেই ঘেরা রয়েছে ভুটান পাহাড় দিয়ে। অন্যদিকে বোঝাই যায় গভীর জঙ্গল। ওদিকে আকাশ কালো করে এসেছে। ড্রাইভারের তাড়ায় উঠে পড়লাম গাড়িতে, বৃষ্টি নামলে আর যে গাড়ি যদি পাড়ি দিতে পারবে না। বাকিটা পথ চারিদিকের সবুজ, সামনের ভুটান পাহাড় আর জঙ্গলের অনুভুতি সারা শরীরে মাখতে মাখতে পৌঁছলাম বান্দাপানি ফরেস্ট ইন্সপেকশন বাংলো তে। উত্তম ঘর দেখালে, প্রথম ধাক্কা খেলাম। এত সেই ফাঁকা মাঠের সুন্দর কটেজ নয়! এত ঝাঁ চকচকে একটা আস্ত বাড়ি, যার সাথে ওদের ওয়েবসাইট এ দেয়া ছবির কোনো মিল নেই। জিজ্ঞেস করায় উত্তম বললো ওই কটেজ এখন abandoned. অতএব মেনে নেওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। উপরি পাওনা, ফ্যান বলে কিছু নেই যেহেতু সোলার এ চলে সব। এই তথ্য টা অবশ্য আগেই জানতাম। বারান্দায় গিয়ে অবশ্য মনটা ভরে গেল। সামনেই নদী। আর তারপরেই ভুটান পাহাড় নিজের স্বমহিমায় হাতছানি দিয়ে ডাকছে। ইতিমধ্যে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নেমেছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই ফ্যান ছাড়া acclimatized হয়ে গেলাম।
৩:
পরদিন সকালে উত্তমের সাথে বাইকেই riverbed ধরে চললাম ১০ কিমি দূরের গোমটু বাজারে। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন।
গোমটু ভুটান এ। রবিবার হাট বসে, তাই permit ছাড়াই ওই হাট অব্দি যাওয়া যায়। ভুটানের Lakhi Cement ফ্যাক্টরির পাশেই এই হাট। উত্তম আমার জন্য বাজার করছিল। আর আমি আমার লেন্সে এত সহজেই পাওয়া অন্য একটা দেশকে বন্দি করছিলাম।
মনে মনে ঠিক করে নিলাম পরদিন permit নিয়েই ভেতরে ঢুকবো….গোমটু monastery অব্দি যাবো পাহাড় বেয়ে। এইদিন বিকেলটায় সুক্তিখোলা র পাড়ে বসে শুধু দিগন্ত বিস্তৃত নদীর চর আর আকাশের অস্তমিত সূর্যের নানা রঙে নিজের লেন্স আর মন টাকেও রঙিন করে তুললাম।
৪:
ঈদের দিন বেরিয়ে permit নিয়ে সোজা Gomtu Monastery. মানুষজনের অসামান্য সহাবস্থান এই জায়গাটায়। এখানকার লামারা দেখলাম ভাঙা ভাঙা হিন্দি বলতে পারে। ভেতরে ঢুকে অবাক হলাম। বুদ্ধ ছাড়াও আরো এক মূর্তি। গলায় তাঁর নড়মুন্ডের মালা। মা কালী নন।
বুঝলাম, পাশাপাশি দেশের সংস্কৃতির মতো বিশ্বাস ও মিলে মিশে একাকার। এবার নামার পালা। পাহাড় থেকে নামার সময় বানাদাপানির অপরূপ রূপ দেখলাম birds eye view থেকে। নদীর বাঁক গুলো পরিষ্কার।
যেন হাতে আঁকা কোনো ছবি। ফেরার পথে ঠিক করলাম ফরেস্ট এর সেই abandoned bunglow টা দেখবো। গিয়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল। বেশ খানিকটা ফাঁকা জমি। তার ওপর দুটো কটেজ, রান্নার ঘর আলাদা একটু দূরে। একটি ওয়াচ টাওয়ার। আর ক্যান্টিন। বিক্ষিপ্ত ছড়ানো ছেটানো।
চারিদিকে সবুজ আর সবুজ। সামনেই নীল ভুটান পাহাড়। মেঘের আচ্ছাদন তার ওপরে। পেছনে অনাবৃত জঙ্গল। মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে গেলাম। দিগন্তে যেন আকাশ আর পাহাড় মিশে গেছে কোনো এক শিল্পীর জলছবিতে। এমন একটি সুন্দর জায়গা abandoned হয়ে পড়ে আছে!! প্রায় ঘন্টা খানেক প্রাণ ভরে এই জলছবি দেখার পর এবার বিদায়ের পালা। মনে নিয়ে এলাম বার বার ফিরে যাওয়ার এক টান নিয়ে। আলিপুর দুয়ার থেকে ফেরার ট্রেন। Dessert এর মতো আলিপুর দুয়ার থেকে মেল অব্দি সবুজ জঙ্গল দিয়ে শেষ হলো এই সফর।
Hi! I am from Kolkata, India. Travelling and photography is my passion. As I love landscape photography most, travelling goes hand in hand with it. Since my matriculation days I started travelling. I have also penned down a book on my travelling which is available in Amazon in the name of Ghuranchandi – Part 1. Whatever travel experiences I have, I have shared those in my blog in the form of travel stories.