১:
“পাহাড়ের দিকে যাবেন না বাবু,হাতি বেরিয়েছে।” কথাটি আমার উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে দেওয়ার লক্ষ্য আমাকে সতর্ক করা হলেও, আমার মনে প্রভাব টা অন্যভাবে পড়লো। এ তো মেঘ না চাইতেই জল ! শুক্রবার রাত্রের চক্রধরপুর এক্সপ্রেস ধরে আজ সকালে যখন বরাভূম স্টেশনে নামলাম, তখনও এই হাতির ব্যাপারটা মাথায় আসেনি। বলরামপুর ( বরাভূম স্টেশনটি বলরামপুরেই পরে ) থেকে বাস ধরে মিনিট চল্লিশে পৌঁছে গেছিলাম একেবারে মাঠা রেঞ্জ অফিসের গেটের সামনে। এর ভেতরেই মাঠা গাছবাড়ি। WBSFDA রে ওয়েবসাইট থেকে আগেই অনলাইন বুকিং করে রেখেছিলাম। বড়ই সুন্দর মাঠা আসার রাস্তাটি। দুপাশে জঙ্গলের ফাঁকে ফাঁকে কিছু ছোট ছোট গ্রাম। দূরে দেখা যায় পাহাড় শ্রেণী। রাস্তার ওপর থেকেই চোখে পরে পাখি পাহাড়ের একাংশ। মাঠা রেঞ্জ অফিসের সুবিশাল ঘেরাও চত্বর। প্রধান ফটকটি দিয়ে ঢুকে একেবারে শেষ প্রান্তে গাছবাড়িটি। বীরেন্দ্র সিংহ মুর্মু বনবিভাগের এক কর্মচারী, ঠিক কেয়ারটেকার বলা চলে না। তবে গাছবাড়ির পরিষেবার দায়িত্বে আপাতত এই ছেলেটিই আছে, সেটা বুঝলাম।
২:
বীরেন্দ্রর সাথে কথা বলে জানলাম পরশু রাত্রেই হাতির তান্ডব হয়েছে এই তল্লাটে। একটি দাঁতাল হাতি রেঞ্জ অফিসের পেছন দিকের বেড়া ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে রাত্রে। বেড়ার ঠিক পেছন থেকেই জঙ্গল শুরু, কিছুটা এগিয়েই মাঠাবুরু পাহাড়ে ওঠার রাস্তা। সেই রাস্তা দিয়েই হাতির আগমন। বীরেন্দ্র এবং আরও কয়েকজন যখন এদিকে হাতি তাড়ানোতে ব্যস্ত, ঠিক একই সময় এক পাল হাতি ঢুকে পরে কিছুটা আগের গ্রামের ভেতর ধানক্ষেতে। পাকা ধানের লোভে এদের আগমন এই সময় একেবারে দলমা পাহাড় থেকে। শুধু ধান তছনছ করেই এরা ক্ষান্ত থাকেনি, কিছু মাটির ঘরও ভেঙে দফারফা করেছে।
বিস্তারিত জানতে পেরে এতক্ষনে আমাকে সতর্কীকরণ এর কারণ টা বুঝলাম। খাওয়া দাওয়ার কোনো ব্যবস্থা ভেতরে নেই। তবে ধর্মু বাইরের একটি দোকানের লোককে পাঠিয়ে দিলো, সেই রান্না করে নিয়ে আসবে বললো। আসার আগেই কোলকাতা থেকে ফোনে আলাপ হয়েছিলো দিগার্দির ভোলানাথ ঘাটুয়ালের সাথে। আমি ফ্রেশ হয়ে ঘরে আসতেই ভোলানাথ দার ফোন। আজ ওনার হোম স্টের সামনে উনি আয়োজন করেছেন ছৌ নাচের…তাই আমাকে আমন্ত্রণ করলেন। এককথায় ওনাকে সম্মতি জানালাম….আবার মেঘ না চাইতেই জল ! দুপুর গড়াতেই দেখি গাছবাড়ির ঠিক সামনের ফাঁকা জায়গাটিতে রীতিমত এক গ্রামীন সভা বসে গেছে। ফরেস্টের কয়েকজন অফিসার চারটি চেয়ারে বসে, আর তাদের ঘিরে আদিবাসী পুরুষ ও মহিলাদের ভিড়। নিচে নেমে খোঁজ করে জানলাম আজ ওদের সভা হাতির উপদ্রব নিয়ে, গ্রামবাসীদের ঘর বাড়ি আর ফসল কিভাবে হাতিদের থেকে বাঁচানো যায় তাই নিয়ে পরিকল্পনা আর কি।
৩:
প্রায় পাঁচটা নাগাদ, ভোলানাথ দার ম্যাজিক আমায় নিয়ে চললো ৪ কিমি দূরের দিগার্দির দিকে। বড় রাস্তা ছেড়ে একটি সরু রাস্তা ধরলাম আমরা…একেবারে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে এই রাস্তাটি। নভেম্বর মাসের বিকেল। ভোলা দার বাড়ি যখন পৌঁছলাম, তখন অন্ধকার। শুরু হলো ছৌ নাচ। রঙবেরঙের পোশাক আর মুখোশ পরে মাদলের তালে তালে কার্তিক, গণেশ, লক্ষী, সরস্বতী, অসুর, সিংহ, দূর্গা মাতিয়ে রাখলেন ঘন্টা খানেক।
নাচের শেষে ভোলা দার বাড়ির সামনের জঙ্গলটায় কিছুটা গেলাম। আজ পূর্ণিমা। এতক্ষন হ্যালোজেন এর আলোয় বোঝা যাচ্ছিল না। অপরূপ এক রূপ এই জ্যোৎস্না স্নাত অরণ্যের। নৈস্বরগিক এক আলোয় ডুবে রয়েছে দিগার্দি আমার সামনে। মন টাকে টেনে নিয়ে যায় তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় এর ধাত্রীদেবতার গ্রামের মেঠো রাস্তায়, এই দ্যুতি। ভোলা দার ম্যাজিক আমাকে অরে ছৌ নাচের দলটিকে নিয়ে ফেরার পথে রওনা দিলো।
৪:
রাত্রের খাওয়া দাওয়া সেরে সবে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়েছি। হঠাৎ বীরেন্দ্রর একগাল হাসি নিয়ে আগমন। সে জানতে এসেছে যে আমি রাত এগারোটার পর বেরিয়ে একটু নৈশ ভ্রমণে যেতে চাই কিনা, হাতি দেখার চান্স আছে। এমন প্রলোভন কেউ এড়াতে পারে? শীতবস্ত্র কিছু আনিনি তাই বাংলোর দেওয়া তোয়ালেটাই মাথায় জড়ালাম। ক্যামেরা নিয়ে যথা সময় বেরিয়ে পড়লাম বীরেন্দ্রর সাথে। বীরেন্দ্রর এক কাকাও সঙ্গ নিলেন…হাতির ব্যাপারে উনি নাকি এক্সপার্ট। পথে বৈদ্যুতিক আলো বলে কিছুই নেই। রাস্তার একপাশে হালকা জঙ্গলের ফাঁকে ফাঁকে চাষের জমি। অন্যদিকে জঙ্গল গভীর থেকে গভীরতর হয়ে সোজা উঠে গেছে মাঠাবুরু পাহাড়ে। জ্যোৎস্নায় যেন ধুয়ে আছে বিশ্ব চরাচর। রাত্রের অরণ্যের এমনিতেই এক সম্মোহনী শক্তি আছে। তার ওপর আবার পূর্ণিমার চাঁদ। উঁচু উঁচু গাছগুলোর পাতার ফাঁক ফোঁকর দিয়ে তখন ঝিলিক মারছে জ্যোৎস্নার এক স্বর্গীয় দ্যুতি।
চারিদিক এতটাই নিস্তব্ধ যে গাছের পাতা পড়লেও আওয়াজ পাওয়া যাবে। কাকাবাবু মনে হলো কোনো একটা কিছুর জন্য অতি সাবধানী হয়ে গেলেন হঠাৎ। আমার আর বীরেন্দ্রর ইচ্ছে থাকলেও, উনি আর আমাদের এগোতে দিলেন না।
অগত্যা হাতির দেখা না পেয়েই ফিরে এলাম গাছবাড়িতে। বীরেন্দ্র আশ্বাস দিলো সকালে আমাকে নিয়ে যাবে মাঠাবুরু পাহাড়ের ওপর একটা জায়গায়। সেখান থেকে কাছেই একটা জলাশয় দেখা যায়, যেখানে হাতিরা সকালে জলপান করতে আসে।
৫:
পরিকল্পনা মাফিক ৭ টা নাগাদ বেরিয়ে পড়লাম। রেঞ্জ অফিসের পেছনদিকে একটা বেরোনোর রাস্তা আছে। জঙ্গলের মধ্যে দিয়েই রাস্তা। কিছুটা যেতেই বুঝলাম সমতল রাস্তার শেষ, পাহাড়ী খাড়াই শুরু।
উঁচু উচুঁ পাথরগুলোর খাঁজে খাঁজে পা রেখে সাবধানে উঠতে থাকলাম। আশপাশে অজস্র জায়গায় হস্তী বিষ্ঠা ছড়ানো দেখেই বুঝলাম এই পাহাড়ে এখন হাতির অবাধ বিচরণ। বীরেন্দ্র হাতের উল্টোদিক দিয়ে সেগুলো হালকা চেপে তাপ টা অনুভব করার চেষ্টা করছে…এতে বোঝা যায় কতক্ষন আগে হাতি এদিকে এসেছে। যত ওপরে উঠছি, রাস্তা ততই দুর্গম হয়ে উঠছে। দুপাশে গভীর জঙ্গল এদিকটায়, রোদের আলো পর্যন্ত ভালো করে পৌঁছচ্ছে না।
হঠাৎ বাঁদিকের ঘন গভীর জঙ্গল থেকে একটা আওয়াজ পেলাম। শুকনো ঝোপঝাড়ে আধলা ইঁট ছুঁড়ে মারলে যেমন আওয়াজ হয়, অনেকটা সেরকম। দুজনেই থমকে দাঁড়িয়ে কান খাড়া করলাম। এপথে এমন একটা আওয়াজ একেবারেই স্বাভাবিক নয় তা বীরেন্দ্রর মুখের অভিব্যক্তি থেকে বুঝেই গেলাম। “একডা গন্ধ পচ্ছেন স্যার ?” বীরেন্দ্রর এই প্রশ্নে সজাগ হয়ে আমিও গন্ধটা পেলাম। তীক্ষ্ণ আর উগ্র। বীরেন্দ্র ইঙ্গিতে বোঝালো আর এক মুহূর্তও এখানে থাকা ঠিক হবে না। আমার অনভিজ্ঞ সপ্ত ইন্দ্রিয় দিয়েও বুঝতে অসুবিধা হলো না যে ওই আওয়াজ এবং ওই গন্ধ, ঐরাবতের সাবধান সংকেত। এই খাড়াই পাথুরে রাস্তায় হাতির তাড়া খেলে, আমি তো কোন ছাড়…বীরেন্দ্রও জলদি নামতে গিয়ে হাত পা ভাঙ্গবে। আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি নেমে এলাম। এবার আমরা অন্য পথ নিলাম। পাহাড়ে ওঠার পথ ধরার আগেই অনেকটা হাঁটতে হলো। সরু একচিলতে পাহাড়ী পথ। কোথাও বা ঢিলেঢালা নুড়ি পাথর, কোথাও আবার বড় বড় পাথর। যাইহোক, অবশেষে এসে পৌঁছলাম summit এ। এক বহু পুরোনো পাথকুয়া। সেটা ছাড়িয়ে একটু এগিয়েই অরণ্য পিঠ তীর্থধাম মন্দির।
২৮০০ ফুট উচ্চতার মাঠাবুরু হেঁটে জয় করার আনন্দে যখন আমি বিভোর, বীরেন্দ্র ততক্ষনে আশপাশ থেকে ঘুরে এসে বিষণ্ন বদনে খবর দিলো এখন হাতির দেখা সে পায়নি সেই জলাধারের কাছে। একটু হতাশ হলাম ঠিকই, তবে মাঠা জয়ের আনন্দটা সেটা ভুলিয়ে দিলো। কিছুক্ষন থেকে নামতে থাকলাম। এখানে বলে রাখি, এই পাহাড় থেকে নামটাও কিন্তু খুব সহজ নয়। নুড়ি পথে পা হরকাবার বিপদ প্রতিপদে।
৬:
ভোলাদার সাথে কথা বলে আগের দিনই গাড়ি ঠিক করে রেখেছিলাম অযোধ্যা পাহাড় আর আশপাশ টা ঘোরার জন্য। মাঠা জয় করে ফিরে আসতে প্রায় ৩ ঘন্টা লেগে গেলো। গাছবাড়ি তে ফিরে দেখি গাড়ি অনেক আগেই চলে এসেছে। ঝটপট ফ্রেশ হয়ে একেবারে চেক আউট করে বেরিয়ে পড়লাম ড্রাইভার শিকারী মিশ্রর সাথে। মাঠাবুরু কে পেছনে রেখে শাল পিয়াল আর পলাশের জঙ্গল চিরে পৌঁছে গেলাম লহরিয়া ড্যাম।
চারপাশে অযোধ্যা পাহাড় শ্রেণী ঘেরা সুনীল এক হ্রদ। ড্যাম এর শান্ত নিরিবিলি পরিবেশেরই যেন প্রতিফলন তার নিটোল নীল জলে। দূর পাহাড়ের কোল থেকে আসা অনাবিল ঠান্ডা হাওয়া জানান দিচ্ছে শীতের শুরু। হ্রদের ওপারে মাথা উঁচু করে লহরিয়া শিব মন্দিরের হলুদ চূড়া জানান দিচ্ছে তার অস্তিত্ব। বাঁধের ওপরের রাস্তা পার করে পৌঁছে গেলাম সেই মন্দিরে। সেই একই চত্বরে আছে একটি রাম মন্দির।
দর্শন সেরে অযোধ্যার পাকদন্ডী রাস্তা বেয়ে উঠতে থাকলাম শিকারীর সারথিতে। ঝকঝকে রাস্তা। কিছুটা উঠেই নজরে এলো লোয়ার ড্যাম। পাহাড়ের মাজখানে এক ছোট্ট পাহাড়ী নীল জলাশয় যেন। আপার ড্যাম থেকে লোয়ার ড্যাম এ যখন জল ছাড়া হয়, তাতেই উৎপন্ন হয় বিদ্যুৎ। তা থেকেই নাম PPSP ( Purulia Pumped Storage Project )।
আরও কিছুটা উঠে পেয়ে গেলাম আপার ড্যাম। লহরিয়া হোক বা লোয়ার ড্যাম বা অপার ড্যাম….অদ্ভুত এক স্বপ্নীল নীল জলাশয় গুলো। পাহাড়ের মাজখানে অরণ্য উপত্যকায় এই জলাশয় তার রূপের ছটায় মুগ্ধ করে দেবে যেকোনো কাউকে। অবাক হয়ে যেতে হয় প্রকৃতি আর প্রযুক্তির এই মেলবন্ধন দেখে।
৭:
আপার ড্যাম থেকে কিছুটা এগিয়ে পৌঁছে গেলাম অযোধ্যা হিল টপে। ভারত সেবাশ্রম সংঘ কে ডান হাতে রেখে কিছুটা এগোলেই WBCADC র নীহারিকা আর মালবিকা গেস্ট হাউস।
হিলটপ থেকে কিছুটা নেমে পৌঁছে গেলাম ময়ূর পাহাড়। ময়ূর পাহাড়ে ময়ূর নেই তবে ওপর থেকে অযোধ্যার পাহাড় শ্রেণী অনেকটাই দেখা যায়। সকালের মাঠাবুরু জয়ের পর এই ছোট্ট পাহাড়টি বেশ শিশুই মনে হলো।
যাইহোক, আমরা রওনা দিলাম আমাদের পরবর্তী গন্তব্য মার্বেল লেকের উদ্দেশ্যে। পথে পেলাম রাঙাডি গ্রাম। আদিবাসী ঘরগুলোর দেওয়ালে তখন নতুন রঙের প্রলেপ আর ছবি আঁকতে ব্যস্ত কিছু আদিবাসী যুবক যুবতী।
রাস্তার পাশে গাড়ি টা রেখে নেমে কিছুই চোখে পড়লো না। পায়ে পায়ে একটু ওপরের ঢিবিটাতে উঠতেই দৃশ্যমান হলো প্রকৃতির এক অসামান্য সৃষ্টি। হালকা সবুজের আস্তরণে ঢাকা সাদা পাথরের চাঁই এর মাজখানে নীল জলে তখন ঝিকমিক করছে দুপুরের সোনা রোদ। পাথরের খাঁজে খাঁজে কোথাও আবার লাল পাতার গাছ। লাল পাহাড়ীর দেশে কে যেন কোনো মন্ত্রবলে একটুকরো ম্যাসেডোনিয়া এনে সাজিয়ে দিয়েছে। যথার্থই তার নাম, মার্বেল লেক।
৮:
মিনিট পনেরোর মধ্যে আমরা পৌঁছে গেলাম বামনী ফলস। তিনটি ধাপে এই ফলস। একেক ধাপে ঝর্নার একেক রূপ। পাথুরে সিঁড়ি বেয়ে একেবারে নিচ অব্দি গেলে দেখা যায় দুটো চ্যানেল থেকে এসে মিশে যাওয়ার দৃশ্য।
বামনী দেখে চলে এলাম টুরগা ফলস। পাহাড়ী রাস্তার ওপর থেকেই দেখা যায় অরণ্যের মধ্যে অনন্ত ধারায় বয়ে চলেছে টুরগা। রাস্তা থেকে কিছুটা নামলেই আরো সামনে থেকে দেখা যায় টুরগার রূপ।
টুরগা থেকে মিনিট ২০ লাগলো আমাদের চরিদা গ্রাম পৌঁছতে। পুরুলিয়ার মুখোশ গ্রাম। মুখোশের আড়ালে দেখা পেলাম বংশানুক্রমে ধরে রাখা এক মূল্যবান শিল্প সত্বার। ছৌ নাচের মুখোশ মূলত এই গ্রাম থেকেই সব জায়গায় যায়।
বেলা তখন ৪.১৫। রওনা দিলাম পাখি পাহাড়ের উদ্দেশ্যে। মাঠাবুরু কে বিদায় জানিয়ে পাখি পাহাড়ের দিকে এগোনোর সময় রাস্তার পাশের জলাধারে তখন পড়ন্ত বেলার মিঠে আলোয় পাহাড়ের প্রতিচ্ছবি। যেন দিনের শেষে আষ্টেপৃষ্টে পাহাড়কে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে কোনো এক নদীর শাখা। গাড়ি থামিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে দেখলাম সেই দৃশ্য। ইচ্ছে করে যেন দিনের শেষ আলোটা থাকা অবধি নিজেকে বিলীন করে দি এই প্রকৃতির কোলে। কি অসামান্য রূপ তার এই সন্দিক্ষনে !!
শিকারীর তাড়া খেয়ে পা বাড়ালাম পাখি পাহাড়ের দিকে। পাখি পাহাড়ের সামনে যখন নামলাম তখন আলো অতি ক্ষীণ। তবে সেই ক্ষীণ আলোতেও পরিষ্কার চিত্ত বাবুর পাহাড় কেটে জন্ম দেওয়া এক ঝাঁক সাদা সাদা পাখি।
দিনের শেষে যেন তারা ঘরে ফিরতে চাইছে পাহাড় ছেড়ে। বরাভূম স্টেশন ফেরার পথে পেলাম শোভা নদী, এঁকেবেঁকে হারিয়ে গেছে কোন সেই দূর পাহাড়ে।
ট্রেনে উঠতেই বীরেন্দ্র সিংহ মুর্মুর ফোন “দাদা ঠিকমত উঠি গেছেন ট্রেইনে?” দুটো দিন যে কিভাবে হুড়মুড় করে কেটে গেল পুরুলিয়ার আর এই মাটির মানুষগুলোর ভালোবাসার মধ্যে, টেরই পেলাম না।
Hi! I am from Kolkata, India. Travelling and photography is my passion. As I love landscape photography most, travelling goes hand in hand with it. Since my matriculation days I started travelling. I have also penned down a book on my travelling which is available in Amazon in the name of Ghuranchandi – Part 1. Whatever travel experiences I have, I have shared those in my blog in the form of travel stories.