ভোর সাড়ে পাঁচটায় ফ্লাইট ছিল আমাদের। গাড়ি বলা ছিল। আমরা রওনা দিলাম সাড়ে তিনটের সময়ে, আমার শহরে তখন অঝোরে বৃষ্টি। এয়ারপোর্টে যখন পৌঁছলাম বৃষ্টি সামান্য ধরেছে। উড়ান পোর্ট ব্লেয়ারের মাটি ছুঁলো তখন সকাল ৭.৪০। গাড়ি বলা ছিল। আমাদের ড্রাইভার মহেশ নিয়ে এল আমাদের বুক করা হোটেল অম্বিকা রেসিডেন্সীতে। এখানে বলে রাখি আন্দামান এর বেশ খানিক অংশ পাহাড় কেটে বানানো, তাই বেশ চড়াই উতরাই আছে। আমাদের হোটেলটিও বেশ একটু উঁচুতেই ছিল। ঘর থেকে প্রায় সারা শহর দেখা যায়।
পোর্ট ব্লেয়ারে একটি ক্লক টাওয়ার, ব্রিটিশকালীন
লাঞ্চ সেরে আমরা প্রথমেই গেলাম সেলুলার জেল, যা ইংরেজ শাসনাধীন ভারতের হৃদয়বিদারী সমস্ত ঘটনার সাক্ষ্মী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাতটি উইঙ এর মধ্যে বর্তমান তিনটি। মধ্যটির উপর থেকে অপূর্ব ভিউ পাওয়া যায়। গাইড নিলে ইতিহাস বিবরণের সাথে পুরো টা বেশ সুন্দর বোঝা যায়। মিউজিয়াম, সাজাপ্রাপ্তদের কুঠুরি, কাজের জায়গা, ফাঁসিমঞ্চ সব দেখতে দেখতে যেন একটু আনমনা হলাম।
কালাপানি
প্রতিকৃতি
সারিবদ্ধ ঘর
সারি সারি কুঠুরি
ফাঁসি ঘর
ফলকে খোদাই করা নামের মধ্যে প্রায় ৮০-৯০% ই বাঙালী স্বদেশীদের নাম। গায়ে কাঁটা দিল। সন্ধ্যেবেলা আমাদের লাইট এন্ড সাউন্ড শো এর টিকিট কাটা। তাই মাঝে আমরা যাব কর্বাইন্স কভ বিচ, যা পোর্ট ব্লেয়ারের একমাত্র সি বিচ হিসেবে পরিচিত। বিকেলে সেখানে পৌঁছে দেখলাম বেশ জমজমাট সৈকত। কাছেই আন্দামান টুরিজমের রিসর্ট হর্নবিল নেস্ট। সূয্যিমামা সবে অস্ত গেছেন। একটি স্টেজে কান পেতে শুনলাম এক অর্কেস্ট্রা অমর সঙ্গীর বিখ্যাত গানটি বাজাচ্ছে। ধন্য বাঙালী! এখানে একটি বেশ রোমাঞ্চকর স্পিড বোট রাইড নিলাম আমরা, সাগরজলে তীব্র গতিতে সে আমাদের কাছের সবচেয়ে ছোট স্নেক আইল্যান্ডে নিয়ে গেল। ফেরত এসে সবার মুখই দেখার মত ছিল।
ফেরি পারাপার
গাড়িসহ আমরা উঠলাম। কুড়ি মিনিটের মনোরম জলপথ শেষে এল বারাটাং। ইডলি ও কফি প্রাতরাশ সারার পর মহেশ বলে গেল এখান থেকে আমরা যাব লাইম স্টোন কেভ, ম্যানগ্রোভের মধ্যে দিয়ে। একজন স্পিড বোট ড্রাইভার কাম গাইড এল, বোটের নাম ‘বেবো ১’, এই বোটেই যাওয়া আবার এর সাথেই ফেরা। এক বোটে প্রায় আট-ন’জন। দলবদ্ধ থাকতে হবে। এই যাত্রাপথ খুব খুব রোমাঞ্চকর এবং শেষ ২-৩ কিলোমিটার একদম ছবিতে দেখা আমাজনের জঙ্গলের মতো, ম্যানগ্রোভ খাঁড়িপথ।
লাইমস্টোন কেভ যাওয়ার পথে ম্যানগ্রোভ খাঁড়িপথ
যাত্রাপথ
প্রায় আধঘন্টার রাস্তা, চারপাশের রূপে মন প্রাণ দুই ই ভরে যায়। একটি বাঁশের সাঁকোতে নামলাম। গাইড আকাশ বিশেষভাবে বলে দিল যে যেন সবাই একসাথে থাকি, না হলে খোঁজাখুঁজিতে সময় যাবে এবং ফিরতে দেরি হবে। এরপর বেশ চড়াই উতরাই ভেঙে পৌঁছানো গেল লাইমস্টোন কেভ। আমার ভাইজাগের ‘বোরাগুহালু’র সাথে খুব মিল লেগেছে, যদিও এটি আরও primitive.
গুহার ভিতরে
স্ট্যালাকটাইট ও স্ট্যালাগমাইটের উপস্থিতিতে নানারকম অবয়ব তৈরি হয়েছে। গুহার ভিতর বেশ কয়েকটি জায়গা খুব সংকীর্ণ, বেশ অন্ধকারও। গাইড টর্চ ধরে ধরে দেখাচ্ছিল। সাদা রঙের পাথরে আলো পড়ে অভ্র র মতো চিকচিক করছিল….সে এক দারুণ দৃশ্য! কোথাও বাঘের থাবা, কোথাও বৃদ্ধের মুখ কোথাও বা হাঁ করা কুমির। না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। পাথরের গায়ে হাত দেওয়া বিশেষভাবে নিষিদ্ধ, কালচে আভা এসে যাবে তাই। তবে এখানে একটা কথা বলে রাখি, বোট যেখানে নামাবে সেখান থেকে বেশ এবড়ো খেবড়ো রাস্তায় মূলত জঙ্গলের মধ্যে দিয়েই গুহায় পৌঁছানো। প্রায় ২ কি মি। আমার নিজের পায়ে সমস্যা থাকার দরুণ বেশ কষ্টকর মনে হয়েছে। বয়স্কদের কষ্ট হতে পারে। তবে পৌঁছানোর পর নিমেষে ক্লান্তি উধাও হবে এটা হলফ করে বলতে পারি। পথে এক জায়গায় আবার পানীয়র ব্যবস্থা আছে। সাথে অবশ্যই শুকনো খাবার ও জল carry করতে হবে। গুহা দেখে ফিরে এলাম একই পথে। বোটে বারাটাং জেটি।
বারাটাং জেটি
সেখানে মহেশ আমাদের জন্যই অপেক্ষা করছিল। এবার গন্তব্য রঙ্গত। রাস্তা খুব খারাপ। গাড়ি লাফিয়ে লাফিয়ে চলল। মাঝে আরো একবার ভেসেলে উঠতে হয়, গাড়িসহ। উত্তরা-কদমতলা জেটি, রঙ্গত। রঙ্গতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় বেলা দুটো। মহেশ বেশ ভাল একটি বাঙালি হোটেলে নিয়ে গেল। পেট পুরে সবাই খেলাম। হোটেলের মালকিন এক ভদ্রমহিলা, খুব ভাল ব্যবহার। নিজের বাড়ির বাথরুম ব্যবহার করতে দিলেন। এরপর আমরা বিকেলের দিকে রঙ্গতের তিনটি বিচ দেখলাম।
আম্রকুঞ্জ বিচ, রঙ্গত
মরিস ডেরা বিচ রঙ্গত
আম্রকুঞ্জ, মরিস ডেরা আর ধানিনালা। শেষেরটির ক্ষেত্রে বিচের আগে একটি ম্যানগ্রোভ ওয়াক আছে প্রায় ২ কি.মি র। অনেক পাখির ইতিউতি ওড়া দেখা যায় এখানে। বেশ ঘন জঙ্গল। তিনটি বিচই বেশ সাজানো। এবং serene। কোন ভিড়ভাট্টা নেই। আম্রকুঞ্জতে স্নান করা যায়। মরিস ডেরাতে বেশ উঁচুতে একটি ভিউ পয়েন্ট আছে। আমরা সূর্যাস্তের সময়ে গিয়েছিলাম বলে বেশ একটা আলো আঁধারি পরিবেশ হয়েছিল। ফিরতে ইচ্ছা করছিল না।
ধানিনালা বিচ যাওয়ার রাস্তা, ম্যানগ্রোভ ওয়াক রঙ্গত
ধানিনালা বিচ
শেষে এলাম ধানিনালা। আগেই বললাম এটির বেশ খানিক রাস্তা ম্যানগ্রোভ ওয়াক। প্রচুর পাখির ডাক শুনেছি, দেখেওছি কিছু। কিন্তু আলো কমে আসায় তেমন ভাল ছবি হয় নি। ধানিনালা থেকে এবার গাড়ি ছুটল মায়াবন্দর। মাঝে এক জায়গায় বাজার এলাকায় চা খাওয় হল, বেশ সুস্বাদু লেবু চা।
দ্বীপান্তরে ৪র্থ দিন (১০ই মার্চ, ২০২০) – যাত্রাপথে রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা,ডিগলিপুর থেকে পোর্ট ব্লেয়ার
ডিগলিপুরের কালিপুর বীচে আগের দিন যে চাঁদের আলোয় ভেসে যাওয়া রাত দেখেছিলাম সেই স্বপ্নে আচ্ছন্ন থেকেই এসে গেল পরদিন।১০ই মার্চ। নানা পাখির ডাকে ঘুম ভাঙল। নরম রোদ তখন আড়মোড়া ভাঙছে।এই দিনেই আমাদের বিবাহ-পরবর্তী ১০ বছর পূর্ণ হল, যে কারণে এই দ্বীপান্তর – অভিযান। এইদিন আমাদের ডিগলিপুর থেকে পোর্ট ব্লেয়ার ফেরার কথা। প্রায় ৩০০ কি. মি পথ। তাই ব্রেকফাস্ট – ব্রেড-বাটার-অমলেট প্যাক করে নেওয়া হল রিসর্ট থেকে। খুব যত্নে সব কিছু একটি কাগজের প্যাকেটে সাজিয়ে দিয়েছিলেন রিসর্টের কর্মীরা। এই একদিনে মন ঠিক মানল না।দেখা হল না ক্রেগি আইল্যান্ড, আলফ্রেড কেভ ইত্যাদি। আবার ফিরে আসার অঙ্গীকার নিয়ে গাড়ি ছাড়ল। অসম্ভব খারাপ রাস্তা আগের পর্বেই বলেছিলাম। তবে রাতে পোর্ট ব্লেয়ারে ফিরে উদযাপনের আনন্দে এগিয়ে চললাম। ভগবান তখন বোধহয় হালকা হেসেছিলেন বা।
মায়াবন্দর পেরিয়ে রঙ্গতের কিছু আগে বিল্লিগ্রাউন্ড বলে একটি জায়গা আছে। তারও কিছু আগে বেশ পান্ডববর্জিত কিন্তু অসম্ভব সুন্দর এক বন্য জায়গায় আমাদের গাড়ি হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল। যাকে বলে একদম stand-still। মহেশ বেশকিছুক্ষণ পরীক্ষা করে জানাল ইঞ্জিনের একটি বেল্ট কেটে গেছে। গাড়ি আর যাবে না। মাথায় তখন আকাশ ভেঙে পড়ার অবস্থা। বাইরে বেশ ভাল গরম। আমরা কাছের একটি শেডে বসলাম।মহেশ একজনের বাইকে চড়ে বিল্লি গ্রাউন্ড গেল মেকানিক আনতে। রঙ্গত থেকে পোর্ট ব্লেয়ারের বাস এবং বারাটাং এর ১২.৩০ টার কনভয় আমাদের নাগালের বাইরে ততক্ষণে। প্রসঙ্গত, এদিক থেকে কনভয়ের টাইমগুলি হল ৬.৩০, ৯.৩০, ১২.৩০, ৩.০০। অগত্যা যদি তিনটের কনভয় ধরা যায়। এগুলি হল একসাথে গাড়িগুলির জারোয়া ফরেস্ট পেরনোর সময়সূচী। অন্য সময়ে কোন গাড়ি যায় না।
যাইহোক, প্রায় ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করার পর মহেশ মেকানিক নিয়ে এল। গাড়ি তার দোকানে নিয়ে যেতে বলল। প্রায় ঠেলে গাড়ি স্টার্ট করে সারানোর দোকানে আনা হল। আমরা ফাঁকে সেই প্যাক করা ব্রেকফাস্ট ও আরো কিছু শুকনো খাবার খেলাম। আরো প্রায় এক ঘন্টা পর জানা গেল ঐ গাড়ীর যে বিশেষ পার্টস দরকার তা ওখানে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই অন্য গাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে। অসীম ধৈর্য ও মানসিক স্থিতির পরিচয় দিয়ে বেশ কাঠখড় পুড়িয়ে এবং আমাদের পুরো টুরের গাড়ির দায়িত্বে যিনি ছিলেন তার পরামর্শে মহেশ এক ভদ্রলোকের গাড়ির ব্যবস্থা করল পোর্ট ব্লেয়ার পর্যন্ত। তখন প্রায় সাড়ে বারোটা পার ঘড়িতে। তিনটের কনভয় পেতেও বেশ কসরত করতেই লাগবে। এই গাড়িটি একটু ভারী হওয়ায় ঝাঁকুনি একটু কম লাগছিল। রঙ্গতের সেই তিনটি বীচ যা দু’দিন আগে দেখা ঝড়ের বেগে চলে গেল পিছনপানে। তখনও জানতাম না দিনের আরো ঘটনা বাকি ছিল।
এরপর শুরু হল বেশ ঘন জঙ্গল। ঘড়িতে প্রায় পৌনে দুটো। কিছুদূর এগিয়ে আমরা এক জারোয়া পরিবারকে দেখলাম রাস্তার বাঁদিকে। এরা মনে হল একটু প্রিমিটিভ, কারণ আসার দিন দেখা জারোয়াদের মত এদের কারো গায়ে জামা-কাপড় ছিল না। এই জঙ্গলে মোবাইল, ক্যামেরা ইত্যাদি ভিতরে রাখতে হয় আগেই বলেছিলাম। আমরা এগিয়ে চলেছি কদমতলা জেটির দিকে। টিনটিন ঘুমন্ত। একটি পাহাড়ি বাঁক নেওয়ার পর চোখের নিমেষে কয়েকজন জারোয়া এসে আমাদের পথ রোধ করল। মহেশ তো হতবাক। আমরা কোন ছবি তুলি নি, কাঁচ নামাই নি! তবে হল টা কি?
কয়েক সেকেন্ড ওদের অঙ্গভঙ্গী ও উত্তেজিত দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখলাম গাড়ির ড্যাসবোর্ডে মহেশের বেশ বড় স্ক্রিনযুক্ত মোবাইলটি রাখা। ঐ টি ওদের চাই। আশেপাশে কোন গাড়ি চোখে পড়ছে না। আমি তো ভয়ে কুঁকড়ে গেছি। সৌমিত্র ও মহেশ যথেষ্ট বেশি এ সি র মধ্যেও দেখি অকাতরে ঘামছে। আমাদের সবার ফোনই ঢোকানো কিন্তু গাড়ি পাল্টানোর সময়ে অসাবধানতায় হয়তো মহেশের ফোনটি সরানোর কথা মাথাতে আসে নি। বেশ কয়েক মিনিট সামনের পথ আটকানোর পর ওদের কয়েকজন পিছনের দিকে কি যেন দেখতে এল…হয়তো সাথে বাচ্চা আছে সেটাই। সামনের ভিড় পাতলা হতেই মহেশ খুব জোরে প্রায় 4th গিয়ারে গাড়ি চালিয়ে দিল সামনে। কয়েক সেকেন্ডের জন্য বন্ধ হৃৎপিণ্ড আবার যেন চালু হল। পিছনে ফিরে আর তাকাই নি, গাড়ির ভিতর কেউ একটাও কথা বলেনি।
কদমতলা জেটি থেকে
যখন ঝড়ের গতিতে কদমতলা জেটি এসে পৌঁছাল রথ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলাম। আমরা ঠিক করে নিয়েছিলাম একদম তিনটের মধ্যে বারাটাং পৌঁছেই লাঞ্চ করব। গাড়ি একদম এসে থামল বারাটাং এ। তখন ঘড়ির কাঁটা তিনটে ছুঁই ছুঁই। যাক কনভয় টা পাওয়া যাবে। আমরা নাকে-মুখে গুঁজে লাঞ্চ করে ভেসলের অপেক্ষা করলাম। টিনটিন তখন বড় বড় চোখে জারোয়া আক্রমণের গল্প শুনছে। ও তো তখন ঘুমের দেশে ছিল। লাস্ট ভেসলে উঠলাম আমরা, কারণ আমাদের আগেই প্রচুর গাড়ি ছিল। মিডল স্ট্রেট থেকে জিরকাটাং এর পথেও প্রচুর জারোয়া দেখলাম, সূর্য তখন প্রায় অস্তাচলে, আলো- আঁধারি পরিবেশ, কিন্ত বাকি রাস্তা উপদ্রব-হীন ছিল। রোমহর্ষক দশম-যাপন বটে।
বারাটাং জেটি
পোর্ট ব্লেয়ারের হোটেলে আমরা পৌঁছলাম প্রায় সাড়ে ছ’টা। ঘরে যখন চা দিয়ে গেল তখনও সারাদিনের ঘটনার ঘোর কাটে নি। রাতে পোর্ট ব্লেয়ারের বিখ্যাত 4* হোটেল Sea Shell এ আমাদের জন্য candle light ডিনারের ব্যবস্থা ছিল। লাল শিফন আর সাদা শার্টে সেজে উঠে একটি সেডান গাড়িতে Sea shell এর সামনে যখন নামলাম, আশেপাশের মানুষজন এবং আকাশে তখন আর আতঙ্কের লেশমাত্র নেই। সুন্দর গোল মোমবাতি আমাদের টেবিলে রাখা ছিল।
সি শেল এর প্রবেশপথ
আমাদের জন্য আয়োজন
আমরা অর্ডার দিলাম চিকেন সিজলার্স, ফ্রায়েড রাইস, ড্রায়েড হানি চিকেন। খুব সুন্দর ambience। কর্মীদের ব্যবহারও খুব আন্তরিক। খাওয়া শেষে যখন বাইরে এলাম তারাভরা আকাশের নীচে, সামনে বিস্তৃত জলরাশি…. সারাদিনের ঘটনাগুলো চোখের সামনে ভাসতে লাগল….গাড়ি খারাপ হওয়া,জারোয়া আক্রমণ আর দিনের শেষে সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্রে চার-তারা হোটেলে ডিনারের মাধ্যমে দিনাবসান। স্মরণীয় দশম-যাপন। সত্যিই অদ্ভূত এ মানবজীবন…..
Fried Rice
Chicken Sizzler
দ্বীপান্তরে ৫ম দিন ( ১১ই মার্চ) – রস ও নর্থ বে আইল্যান্ড এবং পোর্ট ব্লেয়ার সিটি টুর
এইদিন আমাদের হ্যাভলকের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আগের দিনের ধকল ও দীর্ঘ জার্নির কথা মাথায় রেখে এবং আমাদের টুর অপারেটর এর পরামর্শে আমরা এইদিন পোর্ট ব্লেয়ার এই থাকব ঠিক করলাম।
সেইমত রস ও নর্থ বে আইল্যান্ড যাওয়া ঠিক হল। পোর্ট ব্লেয়ারের রাজীব গান্ধী ওয়াটার স্পোর্টস কমপ্লেক্স থেকে শুধু রস, শুধু নর্থ বে, শুধু ভাইপার বা যেকোন দুটি দ্বীপ একসাথে –এইভাবে টিকিট পাওয়া যায়। আমরা রস ও নর্থ বে একসাথে যাব এইভাবে টিকিট কাটলাম। নর্থ বে তে বেশ কিছু ধরণের ওয়াটার স্পোর্টস হয়। তবে একটি জিনিস এখানকার বিশেষত্ত্ব সেটি হল হাফ সাবমেরিন রাইড, মাথাপিছু ভাড়া ১৮৫০/-, এক ঘন্টার যাত্রা। এখানে গ্লাসবটম রাইড, স্নরকেলিং, প্যারাসেলিং এইগুলি ও হয়। আমাদের হাফ সাবমেরিন এর ভাড়া বেশ একটু বেশি লাগায় আমরা গ্লাস বটম রাইড করেছিলাম।
ঝাঁকে ঝাঁকে অভিবাদন
রস আইল্যান্ড
রস আইল্যান্ডে পৌঁছলাম
রস আইল্যান্ড
রাজীব গান্ধী স্পোর্টস কপ্লেক্স থেকেই টিকিট করেছিলাম। তবে দ্বীপে গিয়েও পাওয়া যায় টিকিট। দরদাম কিন্তু ভালই চলে। রস আইল্যান্ড ইংরেজদের তৎকালীন প্রশাসনিক কর্মক্ষেত্র ছিল। তাদের সেনা-আবাস, রান্নাঘর, হলঘর সবকিছুই আজ তাদের শাসনের চিহ্ন বহন করে ধ্বংসাবশেষরূপে দাঁড়িয়ে আছে। এখানে ভিতরে টোটো নিয়ে ঘোরা যায়, মাথাপিছু ৮০/-, আবার সাথে গাইড নিয়েও হেঁটে ঘোরা যায়, এক্ষেত্রে হেঁটে বেশ খানিকটা চড়াই ভাঙতে হয়।
পুরাতন রাজত্বের চিহ্ন
ইতিহাসের কানাকানি
বেশ কিছু ময়ূর ও হরিণ ছাড়া আছে এখানে। আমাদের বোট ‘অপ্সরা’র চালক আমাদের দু’ঘন্টা সময় দিয়েছিলেন। তবে আমার মতে রস আইল্যান্ডে বিকেলের দিকে যাওয়া উচিত, সন্ধ্যেবেলার লাইট এন্ড সাউন্ড শো টি খুব সুন্দর হয়।
এরপর নর্থ বে আইল্যান্ডে গিয়েও প্রায় দু’ঘন্টার সময়সীমা পাওয়া গেল। গ্লাসবটম রাইডটি সুন্দর, তবে পরে জলিবয় তে গিয়ে মনে হয়েছিল এটি কিছুই না। আমি সাজেস্ট করব একমাত্র হাফ সাবমেরিন করতে চাইলেই নর্থ বে আসা উচিত, নচেৎ এখানকার সব ওয়াটার স্পোর্টস ই হ্যাভলকে আছে। লাঞ্চের আগেই আমরা পোর্ট ব্লেয়ারের হোটেলে ফিরে এলাম।
নর্থ বে আইল্যান্ড
খাওয়া-দাওয়া সেরে আমরা পোর্ট ব্লেয়ারের তিনটি মিউজিয়াম দেখতে বেরোলাম। প্রথমেই গেলাম নাভাল মেরিন মিউজিয়াম সমুদ্রিকাতে। ঢোকার মুখেই একটি বিশাল ব্লু হোয়েলের কঙ্কাল আছে, যেটি একবার নিকোবর এর সমুদ্রতটে ভেসে এসেছিল। ভিতরে পাঁচটি গ্যালারিতে আন্দামান নিকোবর দ্বীপপূঞ্জের ইতিহাস, ভূগোল, অ্যানথ্রপোলজি এবং মেরিন লাইফের বর্ণনা দেওয়া আছে।
সমুদ্রিকা মিউজিয়ামের সামনে ব্লু হোয়েলের কঙ্কাল
বহু ধরণের কোরালের মডেল রাখা, বহুল তথ্য-সম্বলিত। এরপর যাওয়া হল আ্যানথ্রপোলজিকাল মিউজিয়ামে। এখানে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপূঞ্জের বিভিন্ন উপজাতি, তাদের জীবনযাত্রা, খাদ্যদ্রব্য ও বিবর্তনের ইতিহাস অনেক ছবি, মডেল ও লেখার মাধ্যমে বর্ণিত। বেশ অনেক কিছু জানতে পারলাম। এখানে মিউজিয়ামের বাইরে ফুটপাত থেকে তিনজনের এক রকমের টি-শার্ট কেনা হল, আন্দামানের ম্যাপ দেওয়া।
সমুদ্রিকার সমাহার
সমুদ্রিকা তে
এরপর যাওয়া হল ফিসারিজ মিউজিয়ামে। প্রায় বন্ধ হওয়ার সময় হয়ে গেছে, আমরা ই শেষজন যারা টিকিট কেটে ঢুকলাম। ভিতরে ছবি তোলা বারণ। অনেক ধরণের মাছ aquarium এ রাখা। বেশ কিছু জলজ প্রানীর মডেল স্টাফড করেও রাখা আছে। কাঠের ইন্টিরিয়র, বেশ দৃষ্টিনন্দন।
ফিসারিজ মিউজিয়ামে
রস আইল্যান্ডের ভিউ পয়েন্ট থেকে
এরপর ঠিক সন্ধ্যে নামার মুখে আমরা মেরিনা পার্কে এলাম। সমুদ্রতীরবর্তী শহরকে তখন সূর্যাস্তের নরম আস্তরণ জড়িয়ে ধরছে। সন্ধ্যা নামছে ধীরে ধীরে। আমরা পার্কের ভিতর একটি ওয়াচ টাওয়ারের মত জায়গায় বসে ছিলাম। দূরে রস আইল্যান্ডে তখন লাইট এন্ড সাউন্ড শো শুরু হয়েছে। অদ্ভূত মায়াবী লাগছে চারিদিক। প্রায় রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত পার্কে থেকে এবং আলোয় মায়াবী জনপদের কিছু ছবি তুলে হোটেলের দিকে এগোলাম। রাতে কিছু গোছগাছ আছে। পরের দিন হ্যাভলক-যাত্রা যে…..
রাতের মায়াবী আলোয় রাজীব গান্ধী স্পোর্টস কমপ্লেক্স
দ্বীপান্তরে ৬ষ্ঠ দিন ( ১২ই মার্চ) – হ্যাভলকের গল্প
আজ পাড়ি দেওয়া সুন্দরী হ্যাভলকে। এখানকার রাধানগর বীচকে এশিয়ার অন্যতম একটি সুন্দর বীচ হিসেবে ধরা হয়। এখনও পর্যন্ত রস-স্মিথকেই আমার সবথেকে সুন্দর লেগেছিল। তাই মনে একটা চাপা উৎকণ্ঠা ছিল রাধানগর নিয়ে। এর থেকেও সুন্দর!!! হবেও বা।
১২ই মার্চ সকাল সাড়ে ছ’টায় পোর্ট ব্লেয়ারের Haddo জেটি থেকে গ্রীন ওশান ২ তে আমাদের বুকিং ছিল। ছ’টার মধ্যে আমরা জেটিতে পৌঁছলাম। খুব বেশি মালপত্র এখানে না নিয়ে যাওয়াই ভাল। বড় সুটকেস বা ব্যাগ কাছে রাখা যায় না এবং ইকোনমি ক্লাসে লেগ স্পেস বেশ কম। আমাদের দুটো সুটকেসের একটি আমরা পোর্ট ব্লেয়ারের হোটেলেই রেখে এসেছিলাম। বাকি মালপত্র নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে প্রায় এয়ারপোর্টের মত চেকিং সিস্টেম পার হয়ে গ্রীন ওশানে আমাদের নির্ধারিত সিটে গিয়ে বসলাম। পুরোটাই শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত। তবে ইকোনমি ক্লাসটি বেশ একটু চাপা, খানিক ক্লসট্রোফোবিকই লাগছিল। জাহাজের একদম নীচের দিকে খোলের ভিতর এটি। সামনে দেওয়ালে টাঙানো এল সি ডি টিভিতে “পারমানু” শুরু হল। জাহাজ যথাসময়ে ছাড়ল। ভোরে ওঠার ধকলে টিনটিন সদ্য তন্দ্রাচ্ছন্ন। সবে ভাবছি তখন আমি ইস, যদি একটু ডেকে উঠতে দিত!!!!
ভগবান বোধহয় বুঝলেন তক্ষুনি আমার মনের কথাটি…. একজন ক্রু মেম্বার দরজা খুলে বলে দিয়ে গেল যে আমরা সবাই ডেকে উঠতে পারি। পিলপিল করে লোক বেরিয়ে গেল যারা ঘুমন্ত ও যারা ‘পরমাণু’-মগ্ন তারা ছাড়া। সৌমিত্র গেল, টিনটিনকে আমার কোলে শুইয়ে। বেশ কিছুক্ষণ পর এসে বলল,”চল উপরে, অনেক কিছু মিস হবে নয়তো”।ছোটকে ঘুম থেকে উঠিয়ে তার কোঁচকানো কপাল নিয়েই ডেকে নিয়ে গেলাম এবং কথা হারালাম।
প্রচণ্ড গতিতে জাহাজ চলছে। পিছনে ফেনিল সমুদ্র। অসম্ভব হাওয়া এবং আমাদের সাথে চলেছে একাধিক ফ্লাইং ফিস। তবে তারা এতই চপল গতি যে তাদের ছবিতে ধরা গেল না….সত্যিই ডেকে কেন যে আসছে না সবাই….কত কিছু না দেখা রয়ে যেত যে!!
কিছুক্ষণ পর আবার ডেকে ডিস্ক বাজাতে শুরু করল। এমন সব গান এবং গানের বিট পা একজায়গায় রাখা কঠিন। ছোটে মিঁয়ার আবার এসব নাচা-গানা বিলকুল না-পসন্দ। তাও আবার মুড খারাপ….কাঁচা ঘুম থেকে তুলে আনা হয়েছে। তা বলে অবশ্য “হানিমুনিং কাপল” এর উদ্যমে কোন কমতি দেখা গেল না, তাকে একটি স্যান্ডুইচ দিয়ে বসিয়ে তেনারা ডেকে নানা গানের সাথে ভালই পা মেলালেন। বেশ বয়স্ক কিছু মহিলাদের নাচতে দেখে আরো এন্থু পেয়ে গেলাম। নেচে, ঘেমে-নেয়ে ক্লান্ত হয়ে আমিও একটা স্যান্ডুইচ খেলাম। নাচের ডেকটি থেকেও আরো উপরে একটি ছোট ডেকে উঠলাম তিনজনে। দারুণ রোমান্টিক আবহাওয়া। গতিতে জাহাজ,নীচে উদ্বেলিত গাঢ় নীল জলরাশি আর সর্বোচ্চ ডেকে দুলছি আমরা। বেশ কিছু “দু’জন সেল্ফি” নেওয়া হল,পুত্র জল দেখতেই ব্যস্ত ছিল।
যাত্রাপথের আড়াই ঘন্টা কোথা দিয়ে যে কেটে গেল, বুঝতেই পারলাম না। আরো বেশ কয়েকবার ফ্লাইং ফিস দেখা গেল। হ্যাভলকে পৌঁছে জেটি থেকে বেরিয়েই আমাদের আগে থেকে বলা গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। গন্তব্য আন্দামান টুরিজমের ডলফিন রিসর্ট। আমাদের নামে আগে থেকে বুকিং করা ছিল। স্ট্যান্ডার্ড রুমগুলি ‘under renovation’ থাকায় এবং সংখ্যায় কম ‘executive’ রুম বুকড হয়ে যাওয়ায় আমাদের ভাগ্যে ‘deluxe’ রুম জুটেছিল। যদিও ভাড়া বেশ বেশি তবে ঘরে ঢুকে মন ভরে গেছিল। আমাদের রুম নং ছিল ২০৫।
ডলফিন রিসর্ট, হ্যাভলক
ডলফিন রিসর্ট, হ্যাভলক
দুদিক কাঁচ দিয়ে ঘেরা ঘর, একটি ঝুল বারান্দা, বিশাল ঘর, একটি ডাবল বেড, ছোট ড্রেসিং রুম এবং প্রমাণ সাইজের সাজানো একটি বাথরুম। কাঁচের ভিতর দিয়ে সামনে খোলা সমুদ্র দেখা যায়।ঘরে ঢুকে মনে হল এখানে শুধু বসে বসেই দু’দিন কাটিয়ে দেওয়া যায়। এখানে ঘর ভাড়ার সাথে আমাদের তিনজনের unlimited breakfast included ছিল। ঘরে ইলেক্ট্রিক কেটল এবং চা বা কফি বানানোর অফুরন্ত সরঞ্জাম ছিল, শেষ হলে আবার দিয়ে যাচ্ছিল। আমরা ব্রেকফাস্ট সেরে রওনা দিলাম বিখ্যাত রাধানগর বীচের দিকে। ওখানেই স্নান, দুপুরের খাওয়া সেরে একদম সানসেট দেখে ফেরা হবে।
ঐ যে দূরে রাধানগর সৈকত
ডলফিন থেকে মিনিট কুড়ির রাস্তা। বারোটা নাগাদ পৌঁছে দেখি বেশ কিছু লোকজন স্নান করছে। কিন্তু তুলনামূলক ভাবে ফাঁকাই। আমরা একটি দু’পাশ থেকে ঝোপের ক্যানোপি করে রাস্তা দিয়ে বীচে পৌঁছলাম। সত্যিই মোহময়ী রাধানগর। বড় স্রোত বা উত্তাল ঢেউ এর লেশমাত্র নেই, জোয়ার সময় হলেও। পায়ের নীচে মোলায়েম সাদা বালি, বিন্দুমাত্র কিছু বিঁধছে না। আর যতদূর চোখ যায় নীল ও সবুজ রঙের মিশেলে মায়াবী জলরাশি ও দূরে একদিকে বনাঞ্চল দৃশ্যমান । যেদিকেই তাকাই অপূর্ব সব ফ্রেম। আমরা হাঁটতে হাঁটতে মূল বীচটা পার হয়ে তাজ হোটেলের বীচের কাছে অপেক্ষাকৃত ফাঁকা জায়গায় চলে এলাম। এদিকটা বেশ নির্জন। আমরা প্রায় ঘন্টা তিনেক মন ভরিয়ে সমুদ্রস্নান করলাম।
রাধানগর বীচ,হ্যাভলক
এখানে ছেলে এবং মেয়েদের আলাদা স্নান করার বাথরুম এবং চেঞ্জিং রুম আছে। বেশ পরিচ্ছন্ন। চেঞ্জিং রুম থেকে বীচের দিকে খানিক দূর এগিয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ খানিক টা উপরে ‘মহুয়া’ বলে একটি রেস্টুরেন্ট আছে, অনেকটা গাছবাড়ির মতো দেখতে। তবে এইদিন এখানে দুপুরে শুধু ভেজ থালি available ছিল। আমরা তাই খেলাম। তখন প্রায় সাড়ে তিনটে বাজতে যায়। রোদের তেজ দুপুরের মত না থাকলেও সূর্যাস্তের বেশ অনেকটা দেরি। আমরা ধীরে সুস্থে খেয়ে নীচে নামলাম। চারটে বাজতেই দেখি টুরিস্টের ঢল নামতে শুরু করল।
বুঝলাম শুধু সূর্যাস্ত দেখতেই শয়ে শয়ে লোক আসছে। তারা অনেকে তখন সমুদ্রেও নামল। আমরা মূল বীচ পেরিয়ে যেখানে দুপুরে স্নান করেছিলাম সেই জায়গার প্রায় কাছাকাছি চলে গেলাম। বীচে ইতি-উতি অনেকেই তখন বসে পড়েছে, তাদের মধ্যে বিকিনি পরিহিতা তরুণী নিজের বান্ধবীর সাথে বালিতে সানসেট ফটোশুট যেমন করছে, তেমনি হাতে সাদা-লাল চুড়া পরা মেয়েটি সদ্যবিবাহিত বরের সাথে হেঁটে যাচ্ছে। মুখ তার আরক্তিম। ডুবন্ত সূর্যের ছায়া যেন। বেশ লাগছিল আকাশ-সমুদ্র-মানুষের এই মিলমিশ। পশ্চিমপানে তাকিয়ে দেখি অপূর্ব এক রঙের খেলা শুরু হয়েছে।
সমুদ্র এখন বেশ দূরে চলে গেছে, ভাটার সময় যে। প্রশস্ত বালিয়াড়িতে আকাশের লাল-হলুদ-কমলা মেশানো রঙের প্রতিফলন। দূরে একটি ঈষৎ উঁচু পাহাড় সদৃশ জায়গার পিছনে আস্তে আস্তে সূর্যের গমন এবং প্রতি মুহূর্তে আকাশের রঙ-বদল। চোখের সামনে এই সূর্যাস্তের যা রূপ দেখলাম ক্যামেরায় বোধহয় তার কিয়দংশ ধরা গেল। সূর্য ডুবে যাওয়ার পরও মোহিত হয়ে চেয়ে রইলাম শুধু আকাশের দিকে, কত রকম রঙের শেড দেখা গেল তার কোন শেষ নেই…..মরমে বুঝলাম কেন এই সৈকত পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর সৈকত গুলির মধ্যে পড়ে। সান্ধ্যকালীন কালো চা’টি সমুদ্রের পাড়ের একটি দোকান থেকে খেয়েই গাড়িতে উঠলাম ফেরার জন্য। রাতে আমরা একটি বাঙালি হোটেলে খেতে গেছিলাম।
সন্ধ্যেবেলা হাঁটতে বেরিয়ে আলাপ হল সঞ্জু নামের এক অটোচালকের সাথে। সেই ঐ বাঙালি হোটেলের খোঁজ দিল। পাইস হোটেল। ডাল-ভাত-মাছ সহযোগে জম্পেশ খাওয়া হল। হোটেল মালিক আবার বসিরহাটের। সুতরাং সৌমিত্রর সাথে বেশ ভালই জমলো। ডিনার শেষে রিসর্টে ফিরে আমরা ভিতরে অনেকক্ষণ ঘুরলাম,সবে পূর্ণিমা গেছে, চাঁদের আলোয় মোহময়ী লাগছিল রিসর্ট লাগোয়া বিজয়নগর বীচ। ফিরে এলাম ঘরে। গরম জলে সারাদিনের ক্লান্তি মুছে ভাল করে স্নান করা হল তিনজনে। পরদিন সঞ্জুকে বলে রাখা হল কালাপাত্থর বীচে সানরাইজ দেখাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ৬০০/- টাকার বিনিময়ে। ও বলে গেল ভোর সাড়ে চারটেতে রেডি থাকতে। কাঁচের ঘরে মখমলি বিছানায় প্রথম দিনের রাতযাপন।
দ্বীপান্তরে ৭ম দিন (১৩ই মার্চ)
বেশ অন্ধকার থাকতেই আজ ভোরে সঞ্জু আমাদের কালাপাত্থর বীচে পৌঁছে দিল। এই সৈকতের বৈশিষ্ট্য হল সারা সৈকতে কালো পাথর ছড়ানো, স্নানের জন্য একদম অনুপযুক্ত এই বীচ। কিন্তু একই কারণে এক অনন্য বালার্ক এখান থেকে দেখা গেল। বেশ কিছুক্ষণ প্রথম সূর্যের সৌন্দর্য দেখে আমরা রিসর্টে ফিরলাম।
সূর্যোদয় , কালাপাত্থর বীচ, হ্যাভলক
কালাপাত্থরে এনার সাথে দেখা
ডলফিনে চেক-ইন টাইম দুপুর বারোটা। তাই সেই অর্থে প্রথম কম্পলিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট আজ আমাদের। সূর্যোদয় দেখে ফিরে আমরা ব্রেকফাস্টের জন্য গেলাম। ডলফিনের ডাইনিং রুমে গিয়ে দেখি সে এক এলাহি আয়োজন।
রেস্তোরাঁ, ডলফিন রিসর্ট, হ্যাভলক
পদগুলো বলে নিই আগে। আর সবই অফুরন্ত নেওয়া যায়। ফ্রুট জুস, দুধ-কর্ণফ্লেক্স,ইডলি – নারকেল চাটনি- সাম্বার, আলুর পরোটা( সাথে টকদই বা সস), ডিমসেদ্ধ, কলা, ব্রেড (পাশে টোস্টার রাখা ইচ্ছামতো মাত্রায় টোস্ট করা যাচ্ছে), বাটার, জ্যাম, চা এবং কফি। অনেকে দেখি টিফিন বাক্স এনে বসে খাওয়ার পর আবার প্যাক করেও নিয়ে যাচ্ছে। আমরা ভালমতো পেটপুজো করে বেরিয়ে পড়লাম এলিফ্যান্ট বিচের উদ্দেশ্যে। হ্যাভলক জেটির পাশ থেকেই একটা জায়গা থেকে এলিফ্যান্ট বীচের বোট ছাড়ে। আমরা জনা দশেক লোকের জন্য নির্ধারিত বোট ‘বিকাশ রাইডার ২’ যথাসময়ে যাত্রা শুরু করল।
এলিফ্যান্ট বীচ যাওয়ার পথে
এখানে জনপ্রতি টিকিট ১০০০/- টাকা। এর সাথে ১০মিনিটের স্নরকেলিং ফ্রি ১২ বছরের উপরে প্রত্যেক ভিজিটার এর জন্য। হ্যাভলক জেটি থেকে মিনিট ১৫-২০ লাগল এলিফ্যান্ট বীচ পৌঁছাতে। এই বীচটি আয়তনে খুব বড় নয়। এখানে সব ধরণের ওয়াটার স্পোর্টসই হয়। স্নরকেলিং, প্যারাসেলিং, জেট স্কি, ব্যানানা বোট রাইড, সি বাইকিং, সি ওয়াকিং, গ্লাস বটম বোট রাইড ইত্যাদি। যারা স্কুবা করতে চান, হ্যাভলকেই সেটি করানো হয়। ওয়াটার স্পোর্টস সম্পর্কে একটি আলাদা অধ্যায় আমি লিখবো নিজের অভিজ্ঞতা সম্বলিত, তাই এখানে বেশি লিখছি না। এখানে সৌমিত্র কম্পলিমেন্টারি আর আমি পুরো আধঘন্টা – ৪৫ মিনিটের স্নরকেলিং টা করেছিলাম। আমার স্নরকেলিংটি নিয়েছিল ১০০০/- জনপ্রতি, আমার এবং কোরালের জলের নীচের ভিডিও এবং স্টিল ছবিসহ।
স্নরকেলিং এর প্রাপ্তি
এখানে জল বেশ স্বচ্ছ এবং খুব সুন্দর কোরাল দেখা গিয়েছিল। বেশ গভীরে একটি কোরাল রিফ পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল। ক্রনিক শ্বাসকষ্টের জন্য আমি স্কুবা করার অনুমতি পাই নি সংশ্লিষ্ট সংস্থা থেকে। স্নরকেলিং এর সময়ও মাস্ক পরানোর পর সাময়িক কষ্ট হয়েছিল, কিন্তু আসতে আসতে ঠিক হয়ে যায়। আমার কাছে মনে রাখার মতো অভিজ্ঞতা এই স্নরকেলিং। দুজনেরই স্নরকেলিং হয়ে যাওয়ার পর আমরা সমুদ্রের মধ্যে একটি গাছের গুঁড়ির উপর বসেছিলাম তিনজনে। ঢেউ এসে জোরে জোরে ধাক্কা মারছিল। প্রায় বুক পর্যন্ত জল।
এলিফ্যান্ট বীচ, হ্যাভলক
সে এক অপূর্ব অনুভূতি… জল থেকে উঠে সবাই চেঞ্জ করে নিয়ে মিক্সড ফ্রুট চাট খাওয়া হল। ইতিমধ্যে আমাদের বোটচালক ডাকতে এলেন। খেয়াল করলাম হঠাৎ টিনটিন নেই আশেপাশে। খুঁজতে খুঁজতে দেখি উনি কয়েকজন বাঙালি rescue-diver দের নিয়ে কবিতার আসর বসিয়েছেন। কবি শঙখ ঘোষ এর ‘মিস’। আমাদের বোটচালকও সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। কবিতাশেষে ওকে কোলে তুলে আমাদের ডেকে নিল। সবাই তখন ওর মাথা ছুঁয়ে আশীর্বাদ করতে ব্যস্ত। এই দ্বীপের অভ্যন্তরে একটি হাতি আছে শুনলাম, সে আবার সাঁতারও কাটতে পারে। বোট রওনা দিল বেগে, গায়ে লাগছে হাওয়ায় ভেসে আসা সব জলক্ণা। ফিরে চললাম হ্যাভলক।
আমার বহুদিনের শখ একবার ব্যাম্বু চিকেন টেস্ট করার। সকাল থেকে ডলফিনে এবং বাইরে বহু লোককে জিজ্ঞাসা করে ব্যাম্বু চিকেনের হদিস পেলাম না। বেশ মন খারাপ হল। সন্ধ্যেবেলা হাঁটতে বেরিয়ে ডলফিনের উল্টোদিকের রাস্তায় হঠাৎ চোখে পড়ল “Andaman Bamboo Chicken ” লেখা একটি ফ্লেক্স। বেশ অনেকগুলো ফোন নং দেওয়া এবং লেখা হোম ডেলিভারি হয়। প্রথম থেকে সব ক’টি নং ট্রাই করতে লাগলাম। এবং ক্রমে হতাশ হতে শুরু করলাম। অবশেষে শেষ নং টি লাগল।
রুটি ও ব্যাম্বু চিকেন অর্ডার দেওয়া হল। টিনটিনের জন্য ভাত এবং পনীর। সন্ধ্যেবেলা কাছের একটা ক্যাফেতে টুনা ফিস এন্ড চিপস খেয়ে ঘরে ফিরলাম। একটা কোক কিনে নিলাম রাতের জন্য।পরের দিন বিকেলের দিকে আমাদের নীলের লঞ্চ। তাই গোছগাছ সেরে রাখলাম। ঠিক হল রাতে খাওয়ার পর চাঁদের আলোয় ডলফিনের বাউন্ডারির ধারে অনেকক্ষণ বসে থাকব, তখন জোয়ারও থাকবে।
ঠিক রাত সাড়ে নটায় দরজায় বেল। “Hello, Maam, this is Venkatesh from Andaman Bamboo Chicken…this is your order”… অসম্ভব স্মার্ট, বুদ্ধিদীপ্ত এবং চটপটে ছেলেটি। ওকে আমার ব্যাম্বু চিকেন খুঁজে পাওয়ার কাহিনী শোনালাম। নিজের নং টি দিয়ে রাখল। কিন্তু ওর কাছ থেকে আর যে খবরটি পেলাম সেটি বেশ চিন্তা জাগাল। পরের দু’দিনের মধ্যে নীল দ্বীপ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। করোনার থাবায়। তবে আমাদের ক্রুজের টিকিট যেহেতু অটো -ক্যানসেল হয়নি, তাই আমাদের পার পেয়ে যাওয়ার চান্সই বেশি।
ব্যাম্বু চিকেন
টুনা ফিস এন্ড চিপস
রাতে বাঁশ-পোড়া চিকেন দিয়ে জম্পেশ ডিনার হল। সুবিধার্থে ভেঙ্কটেশ এর নং টা এখানে দিয়ে রাখলাম – +91 95319 55356। হ্যাভলকের মধ্যে যে কোন জায়গায় ফ্রি হোম ডেলিভারি।
ডিনারের পর প্রায় রাত এগারোটা নাগাদ রিসর্টের একদম সামনের দিকে একটি খোলা জায়গায় গিয়ে বসলাম। ভরা জোয়ার তখন। দুদিন আগে ৯তারিখ দোল পূর্ণিমা ছিল। তাই চাঁদের আলোয় জোর আছে এখনও। আমাদের ডানপাশ থেকে রিসর্টের বাউন্ডারি শুরু হয়েছে। তার গায়ে এবং আমাদের পায়ের কাছে প্রচন্ড বেগে একের পর এক ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে। মোহিত হয়ে সেই শব্দ এবং উত্তাল সাগরের রূপ চাঁদের আলোয় অনুধাবন করলাম বেশ কিছুক্ষণ। ফিরতে ইচ্ছা করছিল না ঘরে….কিন্তু ফিরতে হয়….পরের দিন ‘নীল’-যাত্রা।
হ্যাভলক সম্পর্কিত কিছু তথ্যঃ
১) হ্যাভলকেই সবরকমের ওয়াটার স্পোর্টস হয়। পরের অধ্যায়ে নীলের কথা লেখার পরে আমি পূর্ণাঙ্গ একটি পর্ব এর ওপরে লিখবো, সবিস্তারে। সাথে থাকুন।
২) হ্যাভলক থেকে নীল আসার সরকারি ফেরী দুপুর বারোটার পর। কিন্তু ডলফাইন চেক আউট সকালে হয়ে যায়। তাই, এলিফ্যান্ট বিচের প্ল্যানটা নীল যাওয়ার দিন সকালে রাখতে পারেন। সময়টা utilise হবে। আমরা অবশ্য এইসময় টা ডলফিনের ভিতরেই হ্যামকে সমুদ্র দেখে কাটিয়েছিলাম, ঘর ছেড়ে দিতে হয়েছিল।
৩) গাড়ির বদলে অটো নিয়ে ঘুরলে প্রায় হাফ দাম পড়ে, তাও দরাদরি করা যায়। প্যাকেজে গেলে অবশ্য আলাদা কথা।
৪) ডলফিনে ব্রেকফাস্টটি কম্পলিমেন্টারি। কিন্তু বাকি খাবারের দাম খুব চড়া বলে আমাদের মনে হয়েছে। তাই আমরা কাছের একটি বাঙালি পাইস হোটেলে খেয়েছিলাম, যে কোন অটোওয়ালা চিনিয়ে দেবে।
৫) নীলে যাওয়ার দিন দুপুরের খাবারটি আমরা প্যাক করে নিয়েছিলাম ডলফিন থেকে। সকালে পেট পুরে ব্রেকফাস্টটা করে নিয়েছিলাম। তাই একটু দেরিতে ঐ প্যাকড লাঞ্চটি খুব কাজে এসেছিল।
৬) ডলফিন রিসর্ট মাস তিনেক আগে মেইল করে বুক করেছিলাম। ওরা available রুম বলে দিয়েছিল। পেমেন্ট মোড এবং কতটা কি করতে হবে তাও বলে দিয়েছিল। অনেক দিন আগেও একবার পিং করেছিলাম, তখন ওরা বলল যে মাস তিনেক আগে মেইল করতে। অনলাইন বুকিং ও ওদের হয়।
মেইল আইডিঃ dolphin.aniidco@gmail.com
প্যাকেজে গেলে এই রিসর্টে সাধারণত রাখে না। তবে ডলফিনে থাকা একটি অভিজ্ঞতা। অন্য রিসর্ট গুলিও ভাল। পাম বিচ রিসর্ট, কোকো বিচ রিসর্ট, বেয়ারফুট এগুলিও নামকরা।
ভোরবেলা বিজয়নগর বীচে দুর্দান্ত সানরাইজ দেখলাম। একদম ঘর লাগোয়া। এইদিন সকালে ব্রেকফাস্টের পর আমরা চেক আউট করলাম। দুপুর পর্যন্ত ডলফিন রিসর্টের ক্যাম্পাসেই ছবি তুলে ও ঘুরে কাটালাম। নীল দ্বীপে যাওয়ার ফেরিটি ছিল সরকারি। মালপত্র ডেকের উপর রেখে জাহাজের খোলসে ঢুকে যেতে হয়। ধারণা ছিল না এটিও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। ছোট ছোট জানলা করা। আড়াইটে নাগাদ লঞ্চ ছাড়ল। বাইরে খুব সুন্দর দেখা যাচ্ছিল…বিস্তৃত জলরাশির মধ্যে দিয়ে জল কেটে সুন্দর এগিয়ে চলেছি আমরা। দেড় ঘন্টার মাথায় নীলের জেটিতে ফেরি পৌঁছাল।
নীল আইল্যান্ডের জেটি
সৌমিত্রর নামের প্ল্যাকার্ড ধরে একজন দাঁড়িয়ে ছিল। সেই আমাদের ড্রাইভার। প্রায় বিকেল হতে চলেছে। লক্ষ্মণপুর ১ বিচে সূর্যাস্ত দেখবো। ড্রাইভার সমুদ্রের একটু দূরে গাড়ি রেখে জানালো যে, সমুদ্রতট ধরে বাঁদিকে বেশ খানিক হেঁটে গিয়ে সমুদ্র একদম উন্মুক্ত হয়ে যাচ্ছে। সেদিকেই সূর্যাস্ত হবে। দেখে আবার এখানেই ফিরে আসতে হবে। আমরা নীচে নেমে বাঁদিকে হাঁটতে শুরু করলাম। এই বিচটিতে বেশ লোকসমাগম দেখলাম এই সময়ে। সবাই সূর্যাস্ত দেখতে এসেছে। এখন তো লো-টাইডের সময়। সমুদ্র অনেক দূরে কিন্তু বিচটি বেশ পাথুরে। তবে সূর্যাস্ত মন কেড়ে নিল।
সূর্যাস্ত, লক্ষ্মণপুর বীচ ১, নীল
রাধানগরের মত না হলেও নিজস্ব মহিমায় বেশ সুন্দর। এখানে একটি দুর্দান্ত লেবু চা খেলাম। যথাসময়ে ড্রাইভার এল। আমাদের বুকিং ছিল আন্দামান পর্যটনের হাওয়াবিল নেস্ট রিসর্টে, এটি জেটি থেকে ঢিলছোঁড়া দূরত্ত্বে। বেশ সুন্দর ছিমছাম জায়গা। রাত্রিবাস এখানেই। পরদিন সকালে সীতাপুর বিচে সানরাইজ দেখবো ঠিক হল।
নীল আইল্যান্ডের আয়তন প্রায় ১৯ বর্গ কি.মি। চারটি বিচ এখানে লক্ষ্মণপুর ১ এবং ২, সীতাপুর এবং ভরতপুর। কোরালের বর্ণাঢ্য জগৎ, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মধুরিমা, প্রকৃতির বিচিত্র খেয়ালে তৈরি পাথরের সেতু— এই সবই রয়েছে নীলে। হ্যাভলকের মত প্রচারের আলোয় না থাকায় এখানে পর্যটকদের আনাগোনা সীমিত। এই সৈকতগুলিতে কৃত্রিমতা প্রবেশ করে নি, নির্জনতাও সুলভ।
সূর্যোদয়, সীতাপুর বীচ, নীল
পরদিন ভোরে সীতাপুর বিচের সূর্যোদয় দেখলাম। একদম সমুদ্রের বুক থেকে বালার্ক দর্শন দিলেন এখানে।আবার বিচের দিকে মুখ করে গাছ থেকে ঝোলানো একটি দোলনা ছিল। সেখানে খানিকক্ষণ “সান-কিসড” হলাম। অনেক ছবি তোলা হল। এরপরই আমাদের ড্রাইভার বলল এখন ভাটার সময় তাই আমরা ন্যাচারাল ব্রিজটা দেখে হোটেলে ফিরব ব্রেকফাস্ট করতে।
ন্যাচরাল ব্রিজ, লক্ষ্মণপুর বীচ ২, নীল
ভাগ্যিস এই সময়ে ও আমাদের নিয়ে গিয়েছিল নয়তো অপূর্ব এক সৃষ্টি দেখা হত না। লক্ষ্মণপুর ২ বিচ। ভাটাতে জল সরে গেছে বহু দূরে। এখানে বেশ কিছু বছর ধরে প্রকৃতির খেয়ালে তৈরি হয়েছে একটি পাথরের ব্রিজ। একে ন্যাচরাল ব্রিজ বলা হয়। এই ব্রীজের আশে পাশে আনাচে কানাচে আছে এক অচেনা প্রাণীজগত, যা শুধু লো টাইডের সময়েই দেখা যায়।
Sea Archin, Coral, Lobster, Sea shell
ন্যাচরাল ব্রিজের অনতিদূরে…দু ধরণের কাকড়া স্টার ফিস বেবি লবস্টার
ন্যাচরাল ব্রিজের কাছেই…Coral, Sea cucumber, sea shell
প্রথমে সংশয় থাকলেও পরে আমরা একজন ভাল গাইড নিয়ে নিই। ফেরার সময়ে বুঝতে পারি না নিলে ভুল করতাম। পাথরের খাঁজে লুকিয়ে থাকা স্টার ফিস হাতে তুলে আনলেন। নানা রঙের কাঁকড়া দেখালেন। আরো দেখলাম লবস্টার, সামুদ্রিক শসা এবং শেষে বেশ খানিক টা এগিয়ে সমুদ্রের দিকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে গেলেন যেখানে অসংখ্য রঙিন মাছ।
ন্যাচরাল ব্রিজের অনতিদূরে…..এটি দেখতে গেলে সাথে গাইড থাকলে ভাল হয়
রিসর্টে ফিরে ব্রেকফাস্ট সেরে আমরা চললাম ভরতপুর বিচ। বিচে স্নান করা এবং জলক্রীড়ার ব্যবস্থা আছে। এখানে আমরা গ্লাসবটম বোট রাইড করেছিলাম। এখানকার জল বেশ স্বচ্ছ। প্রচুর সামুদ্রিক পাখিও চোখে পড়ল।
ভরতপুর বীচ, নীল
তলদেশ ভরতপুর বীচ, নীল
এই বিচে একটি অদ্ভূত জিনিস লক্ষ্য করলাম। মাঝে মাঝে ছায়ার জন্য মাথার ওপর চাঁদোয়া করা, সেখানে ব্যাগ রেখে যতক্ষণ ইচ্ছা ঘুরে আসতে পারেন, কেউ ছুঁয়েও দেখে না। ড্রাইভারের কাছে শুনলাম, সমগ্র আন্দামানেই চুরি ঘটিত অপরাধ কম হয় —- কারণ চারিদিক জলবেষ্টিত হওয়ায় ‘পালাবার পথ’ যে নেই। ভরতপুর বিচের ডানদিকে বেশ কিছুদূর হেঁটে গিয়ে একটি খাঁড়ির মত জায়গায় স্বল্প জলে অসংখ্য বড় শামুক দল বেঁধে হেঁটে যাচ্ছে দেখলাম।
ভরতপুর বীচ থেকে বেশ কিছুদূর হেঁটে গিয়ে এই জায়গাটি, এখানেই দলে দলে শামুক হেঁটে যাচ্ছিল
দুপুরের খাবার সেরে নিয়ে রিসর্টে কিছুক্ষণ থেকে আমরা চলে এলাম জেটিতে। সাড়ে চারটেতে আমাদের পোর্ট ব্লেয়ার ফেরার সরকারি ফেরি ছিল। সমুদ্রবক্ষ থেকে দারুণ এক সূর্যাস্ত দেখলাম। সন্ধ্যের মুখে পোর্ট ব্লেয়ার পৌঁছলাম। পরের পর্বে আমাদের এই ভ্রমণের শেষ গন্তব্য জলি বয়।
১) হ্যাভলক থেকে নীলে যাওয়ার ফেরিটি একটু সকালের দিকে হলে ভাল। তাহলে নীলে এসে অনেকটা সময় পাওয়া যায়।
২) ন্যাচরাল ব্রীজ দেখতে হলে ভাটার সময়ে যাওয়া ভাল। তখনই জলজ প্রাণীগুলি দেখা যায়। তবে এখানে একটি কথা বলে রাখি। পিছল পাথরের উপর দিয়ে অনেক দূর হেঁটে হেঁটে যেতে হয়। আমি এবং টিনটিন বেশ কয়েকবার স্লিপ করেছি। তাও গাইড থাকায় উনি সামলে নিয়েছেন। আমি স্নিকার এবং সৌমিত্র ক্রকস পরেছিলাম। তাও স্লিপ কেটেছে। তাই গাইড বলছিলেন খালি পায়ে যাওয়া ভাল। আর বয়স্ক মানুষদের যাওয়া কিন্তু বেশ অসুবিধাজনক।
৩) নীল থেকে পোর্টব্লেয়ারে ফেরার ফেরিটিও দুপুরের মধ্যে হলে ভাল, তাহলে পোর্টব্লেয়ার এসে কোন একটা জায়গা দেখে আসতে পারবেন।
৪) নীলে স্কুবা, স্নরকেলিং, গ্লাসবটম বোট এইসব জলক্রীড়াই হয় এবং চার্জ হ্যাভলকের থেকে অনেক কম।
৫) হাওয়াবিল নেস্ট রিসর্টে বুকিং আন্দামানের পোর্টাল থেকেই হয়। আগের পর্বে লিংক দিয়েছি। এছাড়া ট্যাংগো বীচ রিসর্ট টিও খুব ভাল। ১৫ই ফেব্রুয়ারীর পর থেকে এদের অফ সিজন ডিস্কাউন্ট থাকে।
https://www.tangobeachandaman.com/
অরণ্যানীর অভিবাদন
একজন গাইড বেশ খানিক্ষণ ব্রিফ করল সব দ্বীপগুলির বিষয়ে এবং জলিবয়তে গিয়ে আমরা কি করব না করব সেই বিষয়ে। দূরে দেখা গেল এখন বন্ধ থাকা রেড স্কিন দ্বীপ। প্রায় ঘন্টাখানেক ভেসে চলার পর পৌঁছলাম ‘জলিবয়’ দ্বীপটির কাছে। নাব্যতার কারণে দ্বীপ থেকে বেশ কিছুটা দূরে গভীর জলের মধ্যেই নোঙর করে লঞ্চ। সেখান থেকে ছোট ছোট দুটি স্বচ্ছ কাঁচের পাটাতন দেওয়া নৌকায় চেপে আমরা গিয়ে পৌঁছাই দ্বীপে। কোথাও হাল্কা নীল, কোথাও সবুজাভ নীল আবার কোথাও বা গাঢ় নীল।
জলিবয়
জলের গভীরতার সাথে রঙও ভিন্ন। সবুজ অরণ্যে ছাওয়া সাদা বালি ঘেরা এই সৈকতটির মাতাল করা রূপ আমাদের মুগ্ধ করে সহজেই। এই জলিবয় দ্বীপে টিকিটের সাথে একটি দশ মিনিটের গ্লাসবটম বোট রাইড কমপ্লিমেন্টারি থাকে, আগেই বলেছি। তবে আমরা এখানে এক ঘন্টার একটি গ্লাসবটম বোট রাইড করি।(১০০০/- জনপ্রতি)। তিনটি জোনে বিভক্ত জলরাশিতে বিভিন্ন ধরণের কোরাল, নানা রঙের স্টার ফিস, সি শেল, গোল্ড ফিস, সি কিউকাম্বার, সি অ্যানিমোন, বহু প্রজাতির ও রঙের মাছ দেখা যায় এই রাইডে। জলতলের বেশ গভীরে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে এরা। গ্লাসবটম বোটে একটি নৌকার ভিতর দু’পাশে বসেন যাত্রীরা। তাদের পায়ের কাছে থাকে স্বচ্ছ কাঁচের পাটাতন, যাতে করে নৌকায় জলের গভীরে গিয়ে যাত্রীরা জলের তলদেশটি স্পষ্ট করে দেখতে পান। এই জীববৈচিত্র্য দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল,সত্যিই তো ‘বিপুলা এই পৃথিবীর কতটুকু জানি!
আগে এই জলিবয় দ্বীপে ‘স্নরকেলিং’ও হত। কিন্তু কোরালের ক্ষতি হওয়ার কারণে সেইটি বন্ধ করা হয়েছে। গ্লাসবটম করে ফেরার পথে চালক এক জায়গায় নৌকা থামিয়ে বললেন কাছে বিস্কুট থাকলে গুঁড়ো করে ছড়িয়ে দিতে। অবাক বিস্ময়ে দেখলাম ঝাঁকে ঝাঁকে হলুদ-কালো টাইগার ফিস আমাদের প্রায় হাত ছুঁয়ে খাবার নিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে তাদের মাঝে ঢুকে পড়ছে বড় মাছের দল। ঘটনার খানিকটা ক্যামেরাবন্দী করলাম। অনন্য অভিজ্ঞতা। রাইড শেষ করে দ্বীপে কিছুক্ষণ বসার পর চালকের ডাক পড়ল, ফেরার। ওয়ান্ডুর জেটিতে ফিরে দুপুরের খাবার খেয়ে আমরা ২ কি.মি দূরের ওয়ান্ডুর বিচে গেলাম। নির্জন,শান্ত এই সৈকতটির রূপ অসাধারণ। তবে মাঝে মাঝে কুমীরের আনাগোনা থাকে বলে এখানে স্নান করা বারণ। সোনালি বালি, পরিচ্ছন্ন সমুদ্রতট। ছোট ছোট ঢেউ এর ক্রমাগত আনাগোনা।
জলিবয়….বিদায়কালে
ওয়ান্ডুর বিচ দেখার পর আমরা চললাম চিড়িয়াটাপুর উদ্দেশ্যে। এটি একটি সানসেট পয়েন্ট। সমুদ্র ও পাহাড়ের কোলে অপূর্ব সূর্যাস্ত। এখানে একটি ছোট চিড়িয়াখানাও আছে। কিন্তু আমরা এখানে পৌঁছে দেখলাম করোনার জন্য সব বন্ধ, শুধু সানসেট দেখা যাবে। মুন্ডা পাহাড় ও আমরা যেতে পারিনি। তাও আমরা ভাগ্যকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই যে আমরা প্রায় পুরো ট্রিপটি ই কমপ্লিট করতে পেরেছিলাম। অনেকেই এমন অবস্থায় পড়েছিলেন যে পোর্ট ব্লেয়ার থেকে আর কোথাও যেতে পারেন নি।
চিড়িয়াটাপু থাকাকালীনই sms এল পরেরদিন এর আমাদের ফেরার ইন্ডিগোর ফ্লাইটটি ক্যানসেল হয়েছে। মাথায় প্রায় আকাশ ভেঙে পড়ার অবস্থা। ঐ ফ্লাইটটি চেন্নাই ঘুরে কলকাতা আসার ছিল। চেন্নাইতে তখন করোনার প্রকোপ বেশ। তাই ওখানকার সব ফ্লাইট ক্যানসেলড। অবশেষে অনেক রাতে ইন্ডিগো একটি ডিরেক্ট কলকাতা ফ্লাইট দেয় এবং প্রায় ১.৩০ ঘন্টার চেষ্টায় কাস্টমার কেয়ার এক্সিকিউটভকে আমরা ফোনে ধরতে পারি। আমাদের টিকিটগুলি ঐ ফ্লাইটে ট্রান্সফার করা হয়। অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি। পরদিন ভোরে আমাদের পোর্টব্লেয়ারে হোটেলের ঘর থেকে এক অপরূপ সূর্যোদয় দেখি, এটা একদম surprise ছিল।
আন্দামানের এত সংখ্যক দ্বীপের অভ্যন্তরে আরো অনেক দেখার জায়গা রয়েছে যেমন লং আইল্যান্ড, লিটল আন্দামান, ব্যারন আইল্যান্ড (ভারতের একমাত্র সক্রিয় আগ্নেয়গিরি), মধুবন বিচ ইত্যাদি। এগুলি সবই খুব স্বল্প চর্চিত জায়গা কিন্তু বিচগুলি ভার্জিন। এইসবই পরের বারের জন্য তোলা রইল।
ফেরার সময়ে এই দ্বীপ অন্বেষণের শেষে আমাদের বিমান যখন বীর সাভারকার বিমানবন্দর ছাড়ল, জানলা দিয়ে দেখলাম নীচের দ্বীপসকল একসাথে দাঁড়িয়ে আমাদের বিদায় সম্ভাষণ জানাচ্ছে। সারাজীবনের স্মৃতি-সম্পদ হয়ে রইল আমাদের এই দশদিন—মনে পড়ে গেল।কোন এক ব্যক্তির সেই বিশেষ উক্তি…..
‘Travel is the only thing you buy that makes you richer….”
এবার একটু খরচাপাতি এবং আরো কিছু বিষয়ে বলে রাখি, কয়েকটি দরকারি কথা…
১) আমরা প্রায় আট মাস আগে টিকিট কেটেছিলাম৷ তিনজনের এয়ার ইন্ডিয়ায় যাওয়া আর ইন্ডিগোয় ফেরা মিলিয়ে 26000/- এর মধ্যে হয়ে গিয়েছিল। ইন্ডিগোয় অফার পেয়েছিলাম।
২) আমাদের বেশিরভাগ জায়গাতেই একদিন করে নাইটস্টে ছিল except পোর্ট ব্লেয়ার আর হ্যাভলক। তাই আমরা ঐ জায়গাগুলিতে বেশিরভাগই সরকারি জায়গায় বাজেট রুম নিয়েছিলাম। হ্যাভলকের ডলফিনে আমরা এক্সিকিউটিভ রুম পেয়েছিলাম। আর পোর্ট ব্লেয়ারে অম্বিকা রেসিডেন্সীতে প্রথম তিনরাত বাজেট রুমে এবং পরের দুদিন এক্সিকিউটিভ রুমে ছিলাম। ভাড়া ১০০০-৩০০০/-.
৩) মায়াবন্দরে APWD গেস্ট হাউসে বুকিং টি দৈবাৎ পেয়েছিলাম আগেই বলেছি। তবে ওদের অনলাইন বুকিং হয়।
এখানে ডিটেল পাবেন। এখানে এসি এবং দুটি ডাবল বেডসহ রুম রেন্ট ছিল ১০০০/- আর রাতে তিনজনকে কাঁকড়া, চিকেন, ভাত, রুটি সহ ভুরিভোজ করিয়েছিল— ৬০০/-। তবে একটা কথা এখানে কিন্তু ড্রাইভারের থাকার ব্যবস্থা নেই। বাইরে আছে অন্য হোটেলে।
৪) ডিগলিপুর এ টার্টল রিসর্ট। এসি রুম রেন্ট ১০০০/-. খুব যত্নশীল কর্মীরা। চিংড়ি মালাইকারি ও চিকেন সহ তিনজনের পেটভরা ডিনার ৮০০/- ব্রেকফাস্ট কমপ্লিমেন্টারি। বুকিং অনলাইন। আন্দামান পোর্টাল থেকে।
৫) ডলফিন রিসর্টের সবিস্তার বিবরণ হ্যাভলকের পর্বে দিয়েছি। তিন থেকে চার মাস আগে অনলাইন বুকিং। ওরা availability বলে দেয়। ব্রেকফাস্ট কমপ্লিমেন্টারি।রুমরেন্ট ৩০০০/- থেকে ১০,০০০/- পর্যন্ত, মান অনুযায়ী।
৬) নীল এ হাওয়াবিল নেস্ট। অনলাইন বুকিং। মেইল করে। আন্দামান পোর্টাল থেকে পাবেন। এসি রুমরেন্ট ১০০০/-। ডিনার ও লাঞ্চ সহ ৮০০/-। ব্রেকফাস্ট কমপ্লিমেন্টারি।
৭) সমস্ত ক্রুজ প্রাইভেট ও সরকারি দুই ধরণের হয়। প্রাইভেটে লোকজন এবং আরাম ভাল। তাই ভাড়াও ভাল। আর সরকারিতে দুটিরই মান কম, দামও প্রায় হাফ। বুকিং অনলাইন। আমাদের ক্ষেত্রে আমাদের টুর অপারেটার করে দিয়েছিলেন। আমরা পোর্ট ব্লেয়ার টু হ্যাভলক গ্রীন ওশানে ( প্রাইভেট) এবং হ্যাভলক-নীল ও নীল- পোর্টব্লেয়ার সরকারিতে করেছিলাম। দুক্ষেত্রেই এসি আছে।। প্রাইভেট ক্রুজে খাবারের ব্যবস্থা থাকে।
৮) এবার একটু গাড়ির প্রসঙ্গে আসি। পোর্ট ব্লেয়ার সিটি টুর, হ্যাভলক এবং নীলে অটোতে ঘোরা যায়। বেশ কম পড়ে। আমার সাথে বাচ্চা থাকায় এবং বেশ গরম এর সময় নির্বাচন করায় আমরা এসি গাড়ি রেখেছিলাম ফুল টুরে। তাই এই খরচাটা জ্ঞানতই আমাদের বেশি হয়।
হ্যাভলকে অটো নিই কিছু ক্ষেত্রে। সাধারণ ক্ষেত্রে পোর্ট ব্লেয়ার থেকে যে কোন হাফ ডে বা ফুল ডে ট্রিপ এর জায়গায় নন এসি গাড়ি ভাড়া ৮০০-১০০০/-
আর ডিগলিপুর-মায়াবন্দর-রঙ্গত-বারাটাং দুরাত্রি তিনদিনের নন এসি গাড়ি ভাড়া ১০,০০০-১২,০০০/-
এর মধ্যে গাড়ির তেল, ড্রাইভারের থাকা খাওয়া ধরা।
৯) সাথে বাচ্চা থাকলে অবশ্যই সবসময়ে শুকনো খাবার রাখবেন। বেশির ভাগ দিনই খুব ভোরে বেরনো ছিল আমাদের। ব্রেকফাস্ট হয় প্যাক করে নিতাম যে সব জায়গায় কমপ্লিমেন্টারি ছিল আর নয়তো রাস্তায় করতাম।।
১০) খুব ভোরে বেরনোর দিনগুলো সকালে আমাদের এবং ছেলেকে স্নান করানো সম্ভব হত না। তাই আ
মরা যেখানে রাতে থাকতাম সেখানে গরম জলে রাতে স্নান করতাম। কখনও ই ঠান্ডা লাগে নি।
১১) সেলুলার জেলের টিকিট পোর্টাল থেকে অনলাইন কাটা যায়। সোমবার এবং অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন বন্ধ থাকে।
১২) পোর্ট ব্লেয়ারে মিউজিয়াম গুলি বিকেল সাড়ে চারটেতে টিকিট কাউন্টার বন্ধ করে। তাই পোস্ট লাঞ্চ তাড়াতাড়ি বেরোবেন।
১৩) জলিবয়তে বিন্দুমাত্র প্লাস্টিক allow করে না, আগে বলেছি৷ এক্ষেত্রে এখন বিভিন্ন বড় দোকান থেকে যেরকম বড় কাগজের ব্যাগ দেয় ওরকম ক’টা সাথে নেবেন। খুব সুবিধা হয়৷
১৪) আমরা পুরো টুরে বিসলেরি জল খেয়েছি,সাথে বাচ্চা থাকার দরুণ। টুপি, সানগ্লাস, সানস্ক্রিন আবশ্যক। প্রতিটি সমুদ্রস্নানের জায়গায় চেঞ্জিং রুম আছে। সাথে সুইমিং কস্টিউম ও পর্যাপ্ত চেঞ্জ নিয়ে যাবেন।
১৫) কোন সমুদ্রতটে কোন ফটোগ্রাফার দেখলাম না। তাই এসব ক্ষেত্রে ভাল মোবাইল ই ভরসা।
বেড়ানোর গল্প শেষ হল। নিজেরা প্ল্যান করে স্বচ্ছন্দে আন্দামান ঘুরতে পারেন। সারাজীবনের স্মৃতি হয়ে থাকবে।
প্রয়োজনীয় সাইট
খুব ভাল লিখেছন। অনেক যায়গা ঘুরছেন।আপনারা lucky.Westher এর জন্য আমরা Roce,Bay,Jolyboy যেতে পারিনি। আনদামানেই কেটেছে।Habloc r Neal island গেছি।Rabatag journey আর সেখান থেকে। boat e Mangrove jungle হয়ে গুহা দেখা খুব মনরম।ছবি গুলি সুন্দর তুলেছেন।ধন্যবাদ আমার ঐখানে বেড়ানোর কথা মনে করানোর জন্য।
ধন্যবাদ